ফাতিন হামামা, তাসনিয়া শাহরিন
বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পথে দারিদ্র্য আজও একটি বিশাল বাধা, যা এদেশের নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক সমস্যা। স্থানীয় মিডিয়ায় যথাযথ উপস্থাপনার অভাবে শ্রমজীবী মানুষদের মানসিক পীড়ন, আর এ থেকে উঠে আসা নানা আশঙ্কাজনক সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত ঘটনাগুলোর বেশিরভাগই রয়ে যায় আড়ালে। এমনই একটি ঘটনা হল ঠাকুরগাঁওয়ের একজন হতদরিদ্র কৃষকের, যিনি ঋণের বোঝা বইতে না পেরে এক পর্যায়ে বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। ঢাকা ট্রিবিউন এ সম্পর্কে লিখেছিল:
“ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন এনজিও ও সমবায় সমিতির ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এক কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। নিহত কুঞ্জমোহন (৪০), শুক্রবার ধনতলা ইউনিয়নের অন্তর্গত নাগেশ্বর গ্রামে নিজ আবাসে গলায় ফাঁসি দেন। স্থানীয় সাংবাদিক আল মামুন বলেছিলেন, ‘ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় তিনি তার ঋণ পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত অর্থোপার্জন করতে পারেন নি’ “
কুঞ্জমোহনের মতো দারিদ্র্যের এমন নিষ্ঠুরতার শিকার আরো অনেকেই। তাই দারিদ্র্য, শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের তরুণসমাজের ধারণা থাকাটা খুবই জরুরি। শ্রমজীবী শ্রেণির সুবিধাবঞ্চিত এই মানুষদের শুধু যে থেরাপি গ্রহণের সামর্থ্য নেই তাই-ই নয়, গণমাধ্যমে তাদের এই সমস্যাগুলোর কোন চিত্রায়ণ নেই বললেই চলে।
এই প্রবন্ধে গুরুতর কিছু মনোরোগের লক্ষণসম্পন্ন, নিম্ন আয়ের একজন সাধারণ গাড়িচালকের বর্তমান আর্থিক অবস্থাকে কেন্দ্র করে একটি কেইস-স্টাডি গঠন করা হবে। নিবন্ধটির মূল উদ্দেশ্য হল উক্ত কেইস-স্টাডির মাধ্যমে একটা বাস্তব উদাহরণ দ্বারা একজন মানুষের জীবনে দারিদ্র্যের বয়ে আনা বিরূপ মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবসমূহ তুলে ধরা।
১. পদ্ধতি
১.১ সাক্ষাৎকারীর বিবরণ:
ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে তার প্রকৃত নামের পরিবর্তে ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও তার জন্মসাল, কর্মস্থল ও আবাসস্থল অজ্ঞাত রাখা হয়েছে।
১.২ উদ্ধৃতি:
নিবন্ধটিতে ইন্টারনেট হতে নেওয়া কিছু পরিসংখ্যান, সংবাদপত্রের আর্টিকেলের অংশবিশেষ, ও অন্যান্য তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাই প্লেজারিজম এড়ানোর জন্য শেষে “সূত্র” ও “আনুষঙ্গিক সূত্র” দেওয়া হয়েছে, যেখানে আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশন (APA) ফরম্যাট এ সকল তথ্যসূত্র উল্লেখিত আছে।
১.৩ সাক্ষাৎকারের কেন্দ্রবিন্দু:
সাক্ষাৎকারটির কাঠামো এমন ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যাতে ব্যক্তির মানসিক অবস্থা সম্পর্কিত দিকগুলো বিশেষভাবে ফুটে উঠে। পাশাপাশি তার আর্থিক সমস্যা নিয়ে একটি সামগ্রিক ধারণা প্রকাশের জন্য বাংলাদেশে জীবন ধারণের নানা মৌলিক পণ্যের মূল্যের সাথে সাক্ষাৎকারীর মাসিক আয়ের কিছু তুলনামূলক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হবে।
১.৪ প্রশ্নমালা:
১. আপনি কি আপনার বর্তমান পেশা নিয়ে সুখী আছেন?
২. যতটুকু আয় করেন তা নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট?
৩. নিজের উপার্জন নিয়ে আপনার অনুভূতি/ বক্তব্য কী?
৪. আপনি কি সুখী?
৫. কী আপনাকে খুশি রাখে?
৬. আর্থিক দুশ্চিন্তা সামাল দেন কীভাবে?
৭. আপনার কি মনে হয় আপনার সমস্যাগুলো শারীরিক এর তুলনায় বরং মানসিক? নাকি এর বিপরীত?
৮. নানান চিন্তা, উদ্বেগের মাঝে নিজেকে কীভাবে ধরে রাখেন? নিজেকে নিয়ে কিছুটা ভাবার সময় কখনো কি হয়?
৯. নানাবিধ সমস্যার মাঝে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে মনে হয় কোনটাকে?
২. প্রেক্ষাপট
২.১ সাক্ষাৎকারী সম্পর্কে বিশদ তথ্য:
সাক্ষাৎকারীর নাম ‘ক’। তিনি ৩৮ বছর বয়সী। তিনি বিগত ৭ মাস ধরে মাসিক ১৫,০০০ টাকা বেতনে একজন গাড়িচালক হিসেবে কাজ করছেন, যা এ পর্যন্ত তার সর্বোচ্চ আয়ের চাকরি। এর পূর্বেও বিভিন্ন জায়গায় একই পেশায় ছিলেন। মাসে তিনি আনুমানিক ৭,০০০-১২,০০০ টাকা আয় করতেন।
২.২ ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের দারিদ্র্য হারের পর্যালোচনা:
বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশগুলোর মাঝে ৩৯তম অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও এর অর্থনৈতিক অবস্থা অস্থিতিশীল, জনসংখ্যার তুলনায় কর্মসংস্থান অনেক কম, এবং বেকারত্বের হার ব্যাপক। ফলে এদেশে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দারিদ্র্যএর দুষ্ট চক্রের মাঝেই আটকা পড়ে থাকে। নিচে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও বেকারত্বের হার সম্পর্কে একটি সারসংক্ষেপ দেয়া হলো:
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-এর মতে, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে এদেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে যথাক্রমে মোট জনসংখ্যার ২১.৮% ও ২০.০৫% মানুষের অবস্থান ছিল। ২০১৯ সালে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৪.২%। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল হতে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান হতে দেখা যায় যে, ২০১৮-২০১৯ সালে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব হ্রাসের মাত্রা পূর্বের তুলনায় অতি ধীরগতির।
তাই আপাত দৃষ্টিতে উক্ত অর্থবছরে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য কমলেও, হ্রাসের হার ছিল অতি ক্ষুদ্র। ফলে এর ভিত্তিতে শ্রমজীবী শ্রেণির মানুষের আর্থিক জীবনে কোনো লক্ষণীয় পরিবর্তন আসে নি বললে ভুল হবে না।
২.৩ ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে মৌলিক পণ্যদ্রব্যাদির মূল্য সম্পর্কিত পর্যালোচনা:
একটি দেশে কোনো এক অর্থবছরে জিডিপি ও মুদ্রাস্ফীতি একই হারে বৃদ্ধি পেলে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হয় না, একই থাকে। নিচে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির হার সম্পর্কে সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো:
বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৫.৫৪৪%, যা ২০১৯ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাড়ায় ৫.৫৯২% এ। অর্থাৎ এই বৃদ্ধির মাত্রা ০.০৪৮%, যা অর্থনৈতিক বিবেচনায় অনেক বেশি।
২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে মুদ্রাস্ফীতির এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা এবং দারিদ্র্য ও বেকারত্বের মন্থরগতির হ্রাসের হার থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, শ্রমজীবী মানুষদের জীবনে এর প্রভাব ছিল নিতান্তই নেতিবাচক। ২০২০ অর্থবছরের কোনো পরিসংখ্যান এখনো প্রকাশিত না হওয়ায় এখানে তা ব্যবহৃত হয়নি। তবে এ বছর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ মহামারীর ভয়াবহ প্রভাবের ফলে এমন পরিস্থিতিতে নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নতির কোনো আশা নেই বললেই চলে।
৩. অনুসন্ধান
৩.১ মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব:
অনুসন্ধান হতে প্রাপ্ত ফলাফল হতে বোঝা যায় যে, সাক্ষাৎকারীর মানসিক অবস্থা মোটেই স্বাভাবিক নয়। তিনি বারবার উল্লেখ করেন যে তার জীবনযাত্রার মান, দেশের অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার ফলে সবসময়ই অতি অসন্তুষ্টিজনক। ফলে, সাক্ষাৎকারটির কেন্দ্রবিন্দু ছিল উক্ত ব্যক্তির নিদারুণ মানসিক পীড়ন, যা মূলত তার মনোরোগের লক্ষণেরই বহিঃপ্রকাশ।
তিনি অবচেতনভাবে মনে পোষণ করছেন, এমন কিছু সম্ভাব্য সমস্যা হলো: ভয়, উদ্বেগ, উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার অভাব। নিচে উল্লিখিত তার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর হতে তাই ধরে নেওয়া যায়।
প্রশ্নকর্তা: “কোন ব্যাপারটি আপনাকে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে রাখে? চোখ বন্ধ করে একবার ভাবলে কোন চিন্তা আপনাআপনি মাথায় এসে ধরা দেয়?”
ব্যক্তি: “আমি পরের মাসে কেমনে নিজের ভরণপোষণের খরচ জোগাড় করব? এমন যদি হয় যে আমি আমার চাকরি হারায় ফেলি, বা কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ি? প্রতিমাসে বেতন পাওয়ার পর আমি তার বেশিরভাগই জমায় রাখার চেষ্টা করি। মাঝেমধ্যে সকাল বা দুপুরের খাবার খাই না, টাকা বাঁচানোর জন্য সেই মগবাজার থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত (আনুমানিক ৭.৭ কি.মি এর পথ) পায়ে হাঁইটা আসি।”
“যদি আমার শুধু মাথার উপর একটা ছাদ, আর প্রতিদিন একটু খাবার-পানির নিশ্চয়তা থাকত, তাইলে তাই আমার জন্য যথেষ্ট হইত। এগুলা যদি মানুষের বাঁইচা থাকার জন্য নিতান্তই জরুরি না হইত, তাইলে আমি তাও চাইতাম না কারণ আমার প্রতিদিন এইগুলা ভোগের সামর্থ্য নাই।
মাস শেষে যখন জমায়ে রাখা টাকাগুলাও শেষ হয়ে যায়, তখন নিজেরে খুব অসহায় মনে হয়। পেটে দুই দানা ভাত জোগানোর জন্যও কাজ করতে ইচ্ছা হয় না আর।”
এই উত্তরটি স্পষ্টভাবে তার ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ, বর্তমান অবস্থার সম্ভাব্য অবনতি নিয়ে মানসিক চাপ, আর অতীতের কঠিন জীবন সংগ্রাম থেকে জন্ম নেয়া হতাশা ফুটিয়ে তোলে।
যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, “আপনার মতে আপনার এই পরিস্থিতির উন্নতি কীভাবে করা যায়?” তার উত্তর ছিল সাদামাটা কিন্তু খুবই অপ্রত্যাশিত।
তিনি বলেন, “শান্তি। আমি শুধু একটা রাতের জন্য হইলেও শান্তিতে ঘুমাইতে চাই। ৩৮ বছর বয়সে আইসা এর বেশি কিছু আমার চাওয়ার নাই।”
“কোন জিনিস আপনাকে খুশি করতে পারে?” প্রশ্নটির উত্তরে তিনি শুধু একটি কথাই বলেন, “কিছুই না”—যা থেকে বোঝা যায় যে তিনি সত্যিকার অর্থেই জীবনের উপর থেকে আশা হারিয়ে ফেলেছেন।
প্রশ্নকর্তা জোর দিয়ে বলেন, “আবারো ভেবে দেখুন। এমন কিছু কি আছে যা আপনি এখন যেমন আছেন, তার থেকে বেশি ভালো রাখতে পারবে?”
এবার তিনি আরো দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, “যদি আমি এমন বড়লোক মানুষ হইতাম, তাইলে হয়তো সুখে থাকতাম। এছাড়া এই প্রশ্নের উত্তর অন্য কেমনে দিব, তা আমার মাথায় আসতেছে না।” এ থেকে সহজেই ধরে নেয়া যায় যে, তার মানসিক অবস্থার এই অবনতির পিছনে দায়ী একমাত্র দারিদ্র্য।
৩.২ শারীরিক ও মনোঃস্তাত্ত্বিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব:
মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য অনেক দিক দিয়েই পারস্পরিকভাবে সম্পর্কযুক্ত। ফয়সাল মাহমুদ, মুনিরুদ্দিন চৌধুরী, মোঃ আরিফুজ্জামান ও এবিএম আলাউদ্দিন চৌধুরী কর্তৃক রচিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে যে,
“দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, ও বিষণ্নতার মতো অসংক্রামক রোগসমূহ অনেক সময় হৃদরোগ ও শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত নানা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেশ যতই নগরায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এসব ঘটনা ততই সার্বজনীন হয়ে উঠছে। ”(১৪).
এমন কি আমাদের সাক্ষাৎকারীও বলেন যে, “এই সমস্যাগুলা যতটা না মনের, ততটাই শরীরের মনে হয়। যখন কিছু নিয়ে খুব টেনশন করি, তখনি শরীরে কেমন জানি ব্যথা হয়।”
তিনি বহুদিন ধরে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপেও ভুগছেন। ক আরো বলেন, “আমারে এত ওষুধ খাইতে হয় যে আমি ঠিকমতো জানিও না যে কোনটা কিসের জন্য। এতসব আর্থিক সমস্যার উপরে আবার শরীরের রোগ-বালাই একসাথে সামাল দিতে আর পারি না।
মনের অশান্তি, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি তার মনোঃস্তাত্ত্বিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করছে। এ নিয়েই তিনি স্বীকার করেন যে, তার যেকোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে বেগ পেতে হয়। প্রতিনিয়ত বিষণ্ণ থাকার কারণে তিনি তার জীবনের সাধারণ কাজগুলো যেমন গাড়ি চালাতে এবং অন্যান্য মানুষদের সাথে কথা বলতে—আর উৎসাহ বোধ করেন না। অর্থাৎ তিনি নিজের সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ পাবার কোনো উপায় খুঁজে পান নি। ক আরো বলেন যে, “ছোটখাটো কিছু করতে গেলেও অনেক মনোযোগ দিয়ে করা লাগে। আমি আগের মত ড্রাইভ বা রান্নাও করতে পারি না, কারণ আমার মাথায় সবসময়ই কোনো না কোনো কিছু নিয়ে নানা চিন্তা ঘুরপাক খাইতে থাকে।”
৪. উপসংহার
এই ক্ষুদ্র পরিসরের কেইস-স্টাডি টি মূলত দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়েছে। প্রথমত, দারিদ্র্যের কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ মাত্রার মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার একটি বাস্তব উদাহরণ। দ্বিতীয়ত, একজন মানুষের মনোঃস্তাত্ত্বিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর উক্ত সমস্যাগুলোর প্রভাব।
আমাদের দেশের শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষদের সামগ্রিক জীবনমানের উন্নতি নিশ্চিত করতে হলে এই দু’টি ব্যাপার আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বাইরের অনেক দেশে মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাপারটিকে অনেক গুরুত্বের সাথে দেখা হয়, বাংলাদেশ সেদিক দিয়ে এখনো অনেক পিছিয়ে; কেননা আমাদের দেশ এখনো অর্থনৈতিকভাবে অতটা উন্নত হয়ে উঠে নি।
এ নিয়ে ঢাকা ট্রিবিউন লিখেছিল যে,
“দেশে প্রতি ৫ জনের মাঝে ১ জন ব্যক্তি বিষণ্ণতায় ভুগে থাকেন। কিন্তু সমাজে মানসিক সমস্যা নিয়ে প্রচলিত নানা ভুল ধারণা ও কুসংস্কার ও পর্যাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের অভাবে তাদের পক্ষে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় সাহায্য ও চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ হয় না।”
এছাড়াও উক্ত আর্টিকেলে সাইকিয়াট্রিস্ট ডঃ আশিক সেলিমের ভাষ্যমতে, “এদেশে একজন মনোরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক কাউন্সেলিং পাওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তার পক্ষে মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞের অধীনে চিকিৎসা লাভ করা বেশ কঠিন। বর্তমানে শুধু হাতেগোনা কিছু মেডিকেল কলেজ এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল এ ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। কিন্তু সরবরাহের তুলনার চাহিদা অনেক বেশি হওয়ায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সেবা প্রদান অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।”
তাই সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সাহায্য নিশ্চিত করতে না পারলে এ দেশকে দারিদ্র্যের কবল ও এর ভয়াবহ প্রভাব থেকে উদ্ধার করা অসম্ভব— বললে ভুল হবে না।
সূত্র:
Desk, Tribune. 2019. May 13. Poverty rate comes down to 21.8% in 2018
Hasan, Kamrul.2018, February 18. World-class mental health clinic opens in Dhaka.
Milu, M. Zakir, 2019, June 15. Thakurgaon Farmer Drowned in Debt Commit Suicide.
Muhammad F., Chowdhury M., Arifuzzaman M., Chodhury ABM., “Public Health Problems in
Bangladesh: Issues and challenges”, South East Asia Journal Of Public Health. ISSN: 2220-9476.
আনুষঙ্গিক সূত্র:
www.statista.com/statistics/438363/inflation-rate-in-bangladesh/
data.worldbank.org/indicator/FP.CPI.TOTL.ZG?locations=BD
www.imf.org/external/pubs/ft/weo/2018/01/weodata/weorept.aspx?