সৌগত দেবনাথ
যেকোনো অপরাধের ক্ষেত্রেই মৃত্যুদণ্ড কোনো সমাধান ছিল কি না — এই আলোচনাটাই খোদ বিতর্কিত ও নানা দ্বিধা-সংশয়ে ভর্তি। তবে অনেক বিশ্লেষকের মতে এই শাস্তি ভালো কিছু নিয়ে আসে না। অনেকেবই আবার এটাকে যেকোনো ঘরানার শুদ্ধিকরণ আদর্শের পরিপন্থী, অনেকে আবার এটাকে সেলফ্ কনট্রাডিক্টরি মেথড বলেও অভিহিত করে থাকেন। আমাদের চারপাশে আমরা যে একদম সাদাসিধা গোছের লিঙ্গকর্তন জাতীয় কথাবার্তাও আইন হিসেবে পাশ করানোর দাবি দেখতে পাই, তার কোনোটি বাস্তবায়ন হলে তা একটি ট্র্যাজেডির সৃষ্টি করবে বলেই তাদের মত।
লিঙ্গ কেটে ফেলে দেওয়াও কোনো সমাধান না, বরং লিঙ্গ থাকলেই যে তা একজন পুরুষকে নারীদেহের ওপর অথোরিটি দেয় না — এই ধারণাটি প্রচার করাই সমাধান হিসেবে সেটাই বারগেইন চিপ হিসেবে কাজ করে এসেছে ধর্ষণ বিষয়ে রাজদণ্ড বিরোধী যুক্তির ক্ষেত্রে।
তবে লিঙ্গ কর্তনের মতো একেবারেই অযৌক্তিক কথাবার্তা আদালতের উঠানে তেমন কোনো গুরুত্ব না পেলেও, বিশ্বজুড়েই মৃত্যুদন্ড এবং বিশেষ করে আমাদের দেশের এই মুহূর্তের ধর্ষণ বিরোধী প্রেক্ষাপটে মৃত্যুদণ্ড ধর্ষণের সমাধান কি না, তা নিয়ে ব্যাপক আলাপ আলোচনা প্রায় প্রতিটি জায়গাতেই চলছে। কেউ বলছে ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের মধ্যে দিয়েই পাওয়া যাবে ধর্ষণ থামানোর উপায়, কেউ বলছেন, এমন আইন হলে আরো বেড়ে যাবে ধর্ষণের ঘটনা। ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও দেখা যাবে আগের থেকে বেশি।
আসলেই কি মৃত্যুদণ্ড ধর্ষণের সমাধান? কেন একজন মানুষ মৃত্যুদণ্ডের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করতে পারে এবং কেন এ ধারণাতেই বিশ্বাস করা উচিৎ — সেটাই এ আলোচনার উপজীব্য।
প্রথমত, মানুষ একজন খুনিকে ঘৃণা করে। কেন করে? কারণ সে বিশ্বাস করে কোনো মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার অধিকার অন্য কোনো মানুষের নেই। অর্থাৎ একটা মোরাল কম্পাসের ভিত্তি ধরে এটাকেই প্রতিষ্ঠিত সত্য ধরা হয়েছে যে কারো প্রাণ কেড়ে নেওয়াই একটি অপরাধ৷ এ কারণেই রাষ্ট্র খুন করার বিপরীতে শাস্তির ব্যবস্থা করে, কারণ রাষ্ট্রও খুনিকে ঘৃণা করে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, যেই মানুষেরা বিশ্বাস করছে যে সবার নিজ জীবনের উপর অধিকার আছে এবং সেই জীবনের অধিকার কেড়ে নেওয়া উচিত নয়, তারাই আবার রাষ্ট্রের হাতে আরেকজন মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার অধিকার তুলে দিতে চায়। আপনি যদি নিজ জীবনের ওপর নিজ অধিকারে বিশ্বাস করেন, তাহলে যৌক্তিকভাবে আপনি নিজের হাতে কিংবা কারো হাতেই অন্যের রক্ত দেখতে চাইবেন না। অথচ হিউম্যান ডিগনিটিতে বিশ্বাসী মানুষই প্রাণ কেড়ে নেওয়ার বিপরীত মেরুর মানুষ হয়ে একটা প্রাণের বিনিময়ে আরেকটা প্রাণ কেড়ে নেওয়াকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন দেয়। যেহেতু আপনি রাষ্ট্রকে সেই ক্ষমতা দিচ্ছেন এবং এতে আপনার সমর্থন রয়েছে, তাই খুনের বিপরীতে রাষ্ট্র কর্তৃক আরেকটা খুনের রক্ত আদতে আপনার হাতেই লেগে যাচ্ছে। এতে দুটো ব্যাপার ঘটে:
১. আপনি নিজেই একজন খুনী হয়ে উঠছেন, আপনার হাতেই একজনের রক্ত লাগছে, যেই ব্যাপারটার নিষ্পত্তি আপনিই আবার চান।
২. খুন করাকে নৈতিকভাবে একটা জঘন্য কাজ হিসেবে ধরে নেওয়া — আপনি আরেকটি খুনকেই সমর্থন দিচ্ছেন, অর্থাৎ আপনি নিজ আদর্শ ও চিন্তাধারার পরিপন্থী কাজ করছেন।
তাই এখানে একটা স্পষ্ট স্ববিরোধিতা আছে। এই স্ববিরোধিতাকে জেনে শুনে সমর্থন জানানো বোধহয় আদতে একজন মানুষের অন্ধত্বকেই প্রকাশ করে। সমস্যা হয় যখন এই অন্ধত্ব একটা সমাজের অধিকাংশ মানুষের মাঝে দেখা গেলে সেই অন্ধকূপে পুরো একটি সমাজকেই টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।
শাস্তির লক্ষ্য কী?
এখন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে চলে আসে। শাস্তির লক্ষ্য কী? অর্থাৎ শাস্তি দেওয়া হয় কোন গুরুত্ববহ কৃতিত্ব অর্জনে? যারা রাজদণ্ডকে সমস্যা নিবারণের সৌধ হিসেবে ধরে নেন তারা এই প্রশ্নটার উত্তর কখনো চিন্তা করেন নি, এটাই নিখুঁত সত্য, নতুবা তারা প্রথমেই রাজদন্ডকে বাতিল করে দিতেন নিজ চিন্তাভাবনা থেকে। মূল কথা, শাস্তির ধারণাকে তৈরি করা হয়েছিল দু’টো জিনিসকে মাথায় রেখে:
১. অপরাধীকে অনুতপ্ত হতে সাহায্য করা যেন সে ভবিষ্যতে অপরাধের চিন্তা না করে।
২. ভিকটিমের প্রতি সুবিচার দেয়া।
প্রথমত, আপনি যেই রাজদণ্ডের চারণভূমিকে পবিত্র ভাবছেন, সেখানে অপরাধীকে স্যানিটাইজ করার জায়গা নেই। অর্থাৎ তাকে অনুতপ্ত হতে দেওয়ার সুযোগ নেই, তাকে আর অপরাধ না করার মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে সাহায্য করার প্রচেষ্টা নেই। তার কল্লা ফেলে দিলে তাকেও যে ভুল সম্পর্কে অনুতপ্ত করে তোলা যেত এই ধারণাটাকেই আপনি বিকশিত হতে দিচ্ছেন না। শাস্তির যেই ভিত্তিমূলক লক্ষ্য — অপরাধীকে ভুল বোঝানো ও সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা, শাস্তি ব্যাপারটাই যখন এ আদর্শের পরিপন্থী হয়ে ওঠে, তখন তা আসলে ‘শাস্তি’ ধারণাটির উৎস থেকেই লক্ষ্যচ্যুত হয়ে যায়, অর্থাৎ তখন তা আর শাস্তির সামাজিক বৈধতার কারণকেই রিপ্রেজেন্ট করে না। এখানে সমস্যা কী কী হচ্ছে?
১. সেই অপরাধী নিজের অপরাধজীবন থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না।
২. একজন অপরাধীকেও যে বিবেকবোধ জাগ্রত করে ভালো করে তোলা যায়, এ ধারণাটাই সমাজে প্রচারের সুযোগটুকু কেড়ে নেয়া হচ্ছে।
৩. সেই ব্যক্তি নিজের অপরাধের জন্য অনুতপ্ত নয়, বরং অপরাধকে মনেপ্রাণে সঠিক ধরে আপনাদের গালি দিয়ে মরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
৪. সমাজকে অপরাধীর প্রতি ঘৃণা পোষণ করে তার মৃত্যুতে উল্লাস করার সুযোগ দিচ্ছেন, যা আদতে সামাজিক বৈকল্যের উন্মেষ।
দুই নাম্বার পয়েন্ট নিয়ে বলা যাক। একজন অপরাধী তখনই নিজেকে পরিচ্ছন্ন করার চেষ্টা করে যখন তাকে অপরাধ বহির্ভূত জীবনের একটি সুযোগ দেওয়া হয়। রাজদণ্ডের ধারণাকে বহুল প্রচলিত ধারণার স্থান দিয়ে দিলে “অপরাধীকে কখনো বিশুদ্ধ করে তোলা যায় না” জাতীয় নর্মকে প্রথমেই বাহবা দেওয়া হচ্ছে। এর সমস্যা এই যে, কখনো কোনো অপরাধী এরপর থেকে বিবেকের তাড়নায় সঠিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করলেও তার সুস্থ জীবনের সম্ভাবনাকে আপনি সামাজিকভাবে গ্রহণ করতে রাজি হবেন না। কেননা সমাজ এই আদর্শের কথাই ভুলে গেছে তত দিনে।
আর ভিকটিমের প্রতি ন্যায়বিচার নিয়ে কথা বলতে হলে দুটো জিনিস মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত যেকোনো অপরাধ আর তৈরিই না হওয়া অর্থাৎ কাউকে ভিকটিম হওয়ার জায়গা আর না দেওয়াই ভিকটিমের প্রতি প্রথম ন্যায়বিচার। দ্বিতীয়ত, ন্যায়বিচারের ধারণায় কাউকে হত্যা করে ভিকটিমের প্রতি জাস্টিস সার্ভ করা যায় এই ধারণাটা মেনে নিতেই অপরাধ বিশেষজ্ঞরা নারাজ। কেননা ধর্ষণ এমন একটি ভয়ানক অপরাধ এবং নারীকূলের সামাজিক দুর্বলতার জায়গা থেকে তা নারীকে আরো প্রখরভাবে যেখানে ট্রমাটাইজ করে ফেলতে পারে, তাদের বিশ্বাস অপরাধীকে হত্যা করে তার সেই ট্রমাকে ডিল করা হয় না, অধিকন্তু ভিকটিমের মধ্যে মানসিক বিকৃতি গড়ে তোলা হয়। একজন ভিকটিম তখন এটাই বিশ্বাস করতে শেখে যে তার জীবনে খারাপ কিছু হওয়ার বদৌলতে যেকোনো মানুষ মৃত্যুদণ্ড ডিসার্ভ করে এবং সেই ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডে সে উল্লাস বোধ করলে তা নৈতিকতার মানদণ্ডে সঠিক। একজন ট্রমাটাইজড্ ব্যক্তি অর্থাৎ যেকোনো মর্মান্তিক ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়া/অসুস্থ হয়ে যাওয়া ধর্ষিত ব্যক্তিকে আপনি সাইকোথেরাপি না দিয়ে তাকে একজনের মৃত্যুতে উল্লাস করার চেতনা প্রদান করছেন এবং তার ফলে তার মানসিক ট্রমাকে আপনি মানসিক বিকৃতিতে পরিবর্তিত করছেন, এই ব্যাপারটাকে কেউ কীভাবে ভিকটিমের প্রতি সুবিচার ও তার অন্তরাত্মার শান্তি হিসেবে দেখেন এটা নিয়ে হাজারো বিতর্ক চলেছে এবং চলছে। উপরন্তু এটাও বুঝতে হবে যে ভিকটিমের প্রতি ন্যায়বিচার ও ভিকটিমকে কারো মৃত্যুদণ্ড দেখানোর মাধ্যমে মানসিক স্থিতিশীলতা আনতে সহায়তা করা বা তাকে তৃপ্তি দেয়ার প্রচেষ্টায় বিস্তর ফারাক আছে। এটা বুঝলে যে কেউই রাজদণ্ড বিরোধী মানুষ হয়ে উঠবেন, কারণ রাজদণ্ডে সমূহ সম্ভাবনার অদূরদৃষ্টি আশাবাদ এখানেই মুখ থুবড়ে পড়ে বলেই ধরে নেয়া যায়। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই একজন ভিকটিমের দৃষ্টিতে ধর্ষিত হওয়া যতটা ট্রমার ব্যাপার, মনে হয় না অপরাধীর শাস্তি হলেও কোনোভাবে তার ট্রমা কেটে যাবে। কেননা এই পুরুষশাসিত রক্ষণশীল সমাজে ধর্ষকের চেয়ে ধর্ষিতার প্রতি মানুষের ঘৃণা বেশি ছিল এবং আছে। অর্থাৎ অপরাধীর শাস্তি হলেও তাকে ধর্ষণ পরবর্তী জীবনে সম্পূর্ণ আয়ুষ্কাল ধরে যে দুর্ভোগ ও সামাজিক বাধা-ব্যবধান সহ্য করতে হবে, তাতে অপরাধীর শাস্তির ক্ষণিক তৃপ্তি তাকে পরবর্তী জীবনে সংগ্রাম করার প্রণোদনা দেবে এটা ভাবার অবকাশ আছে এমন বাজি সম্ভবত ধরা যায় না।
এবার “সামাজিক বৈকল্যের” কথাটিকে আরেকটু প্রসার দেয়া যাক। যেকোনো অপরাধের বদৌলতে ভিকটিমকে যেই আইনি ন্যায়বিচার দেয়া হচ্ছে, এতে সামাজিক বৈকল্যের নতুন একটি ধারাই কিভাবে অথোরিটি পায়? রাষ্ট্রের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডে অপরাধীর প্রতি শ্লেষ ধারণ করা সমাজ ব্যাপারটিকে মূলত উইন-উইন সিচুয়েশন হিসেবে দেখে। এর ফলে তারা “কারো মৃত্যুতে উল্লাস করা একটি সুস্থ ব্যাপার” জাতীয় ধারণাকেই গ্রহণযোগ্য ভাবার সুযোগ পেয়ে যায়। এটি সমস্যাজনক, কেননা অপরাধের প্রতি স্টিগমা আর অপরাধীর প্রতি স্টিগমা ব্যাপারটি কখনোই এক নয়। আমেরিকায় এড কেম্পারের মতো সিরিয়াল কিলারকেও মেন্টাল হেলথ ইন্সটিটিউটে সুস্থ করে তোলার প্রয়াস চলেছে। সিরিয়াল কিলারদের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ব্যাপারে এফবিআই পদক্ষেপ নিয়েছিল গত শতকেই। প্রতিটি সিরিয়াল কিলারের ইন্টারভিউ নিয়ে একটি কমন ফ্যাক্টরকে তারা চিহ্নিত করেছিল, তা হলো প্রতিটা মাস (mass) মার্ডারার তৈরি হয়েছে ডমেস্টিক ভায়োলেন্স ও ব্যাড প্যারেন্টিংয়ের আফটারম্যাথ হিসেবে। এই ব্যাপারটা বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অপরাধী জন্মগতভাবে অপরাধী হয় না। তারা সিস্টেমের অব্যবস্থাপনার শিকার কিংবা কোনো ভণ্ড আদর্শ দ্বারা ম্যানিপুলেটেড। একজন চোর চুরি করতে বাধ্য হয় কারণ রাষ্ট্র তার মৌলিক অধিকার, জব সিকিউরিটি এসব নিশ্চিত করতে পারে না; প্রতিটা অপরাধের পেছনে কোনো না কোনো অব্যবস্থাপনার বর্তনী রয়েছে, এবং প্রতিটি অব্যবস্থাপনার বর্তনীতে ট্রিগার বাটন হিসেবে কাজ করেছে অপেক্ষাকৃত কোনো ছোটখাটো ব্যাপার। এই ঘটনাকে বলে রোগের কারণ বের করা, যেটা করলে ধর্ষণকে সমূলে উচ্ছেদ করা সহজতর হয়ে ওঠে। তা না করে বরং অপরাধ হতে দেওয়া এবং তারপর সে অপরাধের দোষে দুষ্ট কাউকে নির্মূল করা; ব্যাপারটা উদ্বেগজনক। আর এ কারণেই পৃথিবীতে রাজদণ্ড ও অপরাধ নিবারণ, এ দুটোর মধ্যে গবেষণা করেও কেউ কোরিলেশন খুঁজে পায় নি, অর্থাৎ এগুলো মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ না, বরং প্যারালাল কসেস। প্যারালাল বলা, কারণ শাস্তি দেওয়া হচ্ছে এবং তার সমান্তরালে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছেই, অপরাধের হার কমার বিন্দুমাত্র লক্ষণ নেই। রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে ভ্যাকসিন দেওয়া যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তা অনেক ক্ষেত্রেই অকার্যকর, যেমন এইডস। এবং ধর্ষণ একটি মানসিক রোগ, একটা ম্যানিপুলেশনেটিভ টুল, এটা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এখানে। মানসিক ও সামাজিক রোগকেও তাই শারীরিক রোগের মতোই ডিল করা শেখা প্রয়োজন।
এখন যদি রোগের উৎস নিয়ে কথা বলা হয়, তাহলে ধর্ষণের মতো মানসিক ও সামাজিক রোগের কারণ স্বভাবতই প্রবলভাবে আরোপিত পুরুষতন্ত্র। ধর্ষণের ক্ষেত্রে যৌন হতাশা একটি ট্রিগার বাটন, কিন্তু সম্পূর্ণ বর্তনী আদতে পুরুষতান্ত্রিক ভাবাবেগ। যৌন হতাশা কিংবা যৌন লিপ্সা কখনোই ধর্ষণের অরিজিন না, এর অরিজিন ডমিনেশন। অর্থাৎ, কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। পুরুষ নারীকে ধর্ষণ করে কারণ সে বিশ্বাস করে নারী দুর্বল, নারী ডমিনেশন চায় কিংবা নারী কোনো যৌন খেলনা, লিঙ্গের তৃপ্তির মর্মেই যাকে তৈরি করা হয়েছে। যদি এটা বুঝে থাকেন, তাহলে এবার বুঝতে হবে এই কর্তৃত্বপূর্ণ মনোভাবের উৎস কী। এটার উৎস মূলত রাষ্ট্র, রাষ্ট্রকে ঘিরে গড়ে ওঠা সমাজব্যবস্থা ও পরিবার এবং তাদের পুরুষতান্ত্রিক আদর্শের সুনিপুণ প্রচার। এই প্রচার এতটাই সাবলীল ও স্তরে স্তরে বিন্যস্ত যে এই অন্তর্জালকে সিস্টেম্যাটিক অপ্রেশনের জয়ধ্বজা বলাই যথার্থ। এবং একে আরো গুরুতর করে তুলেছে অব্যবস্থাপনার সুলভ হিড়িক। রাষ্ট্র চেয়েছে অধিক সৈন্য-সামন্ত-শ্রমিক, আর প্রাকৃতিকভাবেই জন্মদান করে নারীরা। তাই রাজ্যের প্রভাব বিস্তৃতিতে অতীতে বহুবিবাহের মতো ব্যাপারকে ঘটা করে প্রচার করার আদর্শে নারীকে পণ্যজাত করেছে রাষ্ট্র, অধিক জন্মদানকে অধিক মহিমান্বিত করেছে রাষ্ট্রই। বর্তমানে এই রাষ্ট্রই আমাদের কিশোর বয়সে যৌন শিক্ষা দেয় না, ধর্ষণ মামলায় উকিলকে নারীর চরিত্র ব্যবচ্ছেদের আইনি বৈধতা দেয়। সেই রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে সমাজব্যবস্থায় নারীর কাপড় দিয়ে তাকে চারিত্রিক সার্টিফিকেট প্রদান করে একগাদা পুরুষ। আর সমাজের প্রতিটা কিশোর যৌন শিক্ষার উৎস হিসেবে পর্ন দেখে, যেখানে নারীর ‘কনসেন্ট’কে ক্যানসেল করে দিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন গল্পভিত্তিক পর্ন মুভিতে যৌন কাতরতায় ডুবে থাকা কিছু আত্মা হিসেবে প্রদর্শন করা হয়। এইসব পর্ন দেখানো হয় তারা চিট করে, তারা পুরুষের যৌন তাড়নাকে স্বীকৃতি দেয় এবং নাটকীয় উপায়ে প্রথমে “আমাদের এটা করা ঠিক হচ্ছে না” বলে দু’ মিনিট পর একজন অচেনা পুরুষ/অফিসের বস/স্কুলশিক্ষকের সাথে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হয়। অর্থাৎ এসকল মুভি কিশোরদের এই শিক্ষাই দেয় যে, নারী ‘না’ বললেও আদতে তাদের হৃদয় ‘হ্যাঁ’ বলে, নারী মুখে না চাইলেও অন্তরে ঠিকই অচেনা পুরুষের সাথে সঙ্গম কামনা করে, নারী ‘না’ বললেও আসলে তাদেরকে সঙ্গমে রাজি করানো সম্ভব। এছাড়াও কিশোররা পরিবারে নারীকে রক্ষণশীলতার কাপড়ে ঢেকে রাখা তেঁতুল/নারকেলের জল হিসেবে দেখেই বড় হয়ে ওঠে, কেনোনা তাদেরকে এসকল রক্ষণশীলতা দিয়ে পরিবারগুলো সচেতনভাবে এটাই বোঝায় যে নারীদের স্বাধীনতা দিলে তারা কুকর্মে লিপ্ত হয়। এবং এই রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের বেড়াজালে প্রতিটা কিশোরের মধ্যে ভবিষ্যতের ধর্ষকের সম্ভাবনা গড়ে ওঠে।
এবার প্রশ্ন, এতগুলো কথা কেন ধর্ষণের উৎস বিষয়ে? কথা তো হচ্ছিল রাজদণ্ডের বিরোধিতা নিয়ে। আর দেখা কীভাবে সব মিলে যায়। যেই রাষ্ট্র ধর্ষক তৈরির পেছনে মূল উৎস হিসেবে কাজ করে, সেই রাষ্ট্রের দোষ একজন ধর্ষকের ওপর চাপিয়ে কেন তার কল্লা ফেলে দেওয়া হবে? কিংবা মূল দোষী, অর্থাৎ রাষ্ট্র, তার কাছেই বা কেন তার দোষের গুরুতর বিচার অন্য কাউকে পরলোকে পাঠানোর মাধ্যমে চাওয়া হবে? এটা যদি বুঝে থাকেন তাহলে পরবর্তী পয়েন্টটা আরো গুরুত্বপূর্ণ। রাজদণ্ড দেওয়ার মাধ্যমে আদতে রাষ্ট্র ছাড় পেয়ে যায় নিজের দোষ থেকে, অর্থাৎ রাষ্ট্রও খুশি, বিচার যারা চাইছে তারাও খুশি। অথচ এর ফাঁক দিয়ে রাষ্ট্রকে আপনি তার নিজের দোষ এড্রেস করার জন্য দাবি জানাচ্ছেন না। রাষ্ট্রকে কৈফিয়ত দেয়ার মিষ্টিটা বাক্সে করে তার হাতে দিয়ে দিচ্ছেন। কাজেই পরবর্তীকালে যখন আপনি প্রশ্ন করতে যান রাষ্ট্রে কেন এই অব্যবস্থাপনা, তখন তারা নিজেদের অক্ষমতা ঢাকতে বলে ওঠে, “সব ধর্ষকেরই তো বিচার করছি”, কিংবা সে প্রশ্নটাই আপনার মাথায় আসে না, যেহেতু আপনি রাজদণ্ড নামক এক হাওয়াই মিঠাই চাটতেই ব্যস্ত।
এবার আসা যাক আরো গভীরে। ধরে নেয়া যাক রাজদণ্ড আইনি আলোচনা পেরিয়ে বৈধতা পেল। এ জায়গায় যেটা বোঝা দরকার, তা হলো ধর্ষকরা সাইকোপ্যাথ মেন্টালিটির মানুষ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, তারা শাস্তির পরোয়া অপরাধের সময় করে না বলেই তারা নিশ্চিন্তে এসকল অপরাধ করে যেতে পারে৷ নাহলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ভার কেউ কেন-ই বা নিতে যাবে কেবলমাত্র কয়েক মিনিটের লৈঙ্গিক তৃপ্তির জন্য? তাদের কাছে কেবল ধর্ষণের মুহূর্তের বিকৃত প্রশান্তিই গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা ধর্ষণ করে। তাই সবাই যখন রাজদণ্ড কায়েম করতে ব্যস্ত, তখন ধর্ষকরা ধর্ষণ পরবর্তী সেইফটি নিশ্চিত করতে উঠে পড়ে লাগে। কারণ ধর্ষণের পরে তার হুঁশ হয় যে এর জন্য তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হতে পারে। এবং তখন সে ধর্ষণের পর এখনকার মতো ধর্ষিতাকে রাস্তায় অচেতন অবস্থায় ফেলে দিয়ে কিংবা পালানোর সুযোগ দিয়ে যাবে না। তখন তারা ধর্ষণ পরবর্তী সময়ে সেই নারীকে হত্যা অথবা গুম করে দেওয়াটাকেই নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য করণীয় বলে মনে করবে। এই যে কেবল ধর্ষণ রোধের আকাঙ্ক্ষায় একজন মানুষকে পরকালে পাঠাতে গিয়ে তার সাথে আরেকজন মানুষেরও পরকালে যাওয়ার পথ সহজ করে দেওয়া হচ্ছে, এর দায় কি রাষ্ট্র নেবে? কে নেবে? নারীকে ধর্ষিত হতে হবে এবং তারপর তাকে মৃত্যুও মাথা পেতে নিতে হবে, এর জবাবদিহি কাকে করা হবে?
আর কঠোর শাস্তির বিধান পর্যালোচনা করে অপরাধ বিশেষজ্ঞরাই একমত হয়েছেন যে, এসব শাস্তির একটাও যদি ফলপ্রসূ হতো, তাহলে সৌদি আরবের মতো দেশে হাজার হাজার ধর্ষণ হতো না। অথচ প্রগতিশীল চিত্তের শান্তিপ্রিয় ইউরোপিয়ান দেশগুলো যে ধর্ষণ রোধে অধিক সক্ষম এটা না মানার উপায় নেই। সমস্যার মূলে না গিয়ে সমস্যার ফলাফলকে নিয়ে লাফালাফি করা হবে, এটা শুধুমাত্র বালখিল্যতা বৈ কিছু না। আর এ ধরনের শাস্তিকে সমর্থন করার মানে বাংলাদেশের মতো দেশে “দেশের আগে দল” জাতীয় রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে ধর্ষণ চাপা দিতে সাহায্যের পরিপূর্ণ হাত বাড়িয়ে দেওয়া। হত্যা নিয়ে যে কথাটা বলা হলো – এবার নিজ দলের ইমেজ রক্ষার্থে তারাই দলের ছত্রছায়ায় থাকা ধর্ষকদের সাহায্য করবে ধর্ষিতাকে হত্যা বা গুম করে দিতে।
এখন প্রশ্ন, “ভায়োলেন্স আটকাতে নিজেরাই ভায়োলেন্স করে আবার ক্রিমিনালকে অধিক ভায়োলেন্স করার সুযোগ দেয়া”, এটা শুনতে কেমন লাগে? কল্লা কর্তনের বিদ্রোহী থিওরিতে যে নারীদের পরকাল নিশ্চিত হচ্ছে, এটা শুনতেই বা কেমন লাগছে?
এছাড়াও, বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে হাজার হাজার ধর্ষণই প্রমাণ করা সম্ভব না, সেখানে মৃত্যুদণ্ড আসলে ধর্ষকের শাস্তির বিধান হিসেবেও কতটুকু সফল তা অনেক বেশি বিতর্কের দাবি রাখে। ফরেনসিক এক্সপার্টরা শরীরে প্রহারের কোনো চিহ্ন না পেলে অনেক ধর্ষণের ক্লেইমকেই নাকচ করে দেন। এছাড়াও, কোনো প্রত্যক্ষদর্শী না থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষণের ক্লেইমটা ক্যান্সেল হয়ে যায়, শরিয়াহ আইনে চালিত দেশগুলো তো চারজন প্রত্যক্ষদর্শী ছাড়া ‘ধর্ষণ ঘটেছে’ ব্যাপারটা বিশ্বাস করতেও নারাজ। আবার, বাংলাদেশে রাষ্ট্র তো আইনি প্রক্রিয়াতেই একজন নারীর চরিত্র হননের ঘৃণ্যতম প্রচেষ্টাকে উকিলের হাতে সোনার খনি হিসেবে তুলে দেয়ার বৈধতা দিয়েছেন। পুরো ব্যাপারটিতে সমস্যা মূলত দুটো:
১. ভিকটিমের দেহে প্রমাণ না পেলে ধর্ষক ছাড় পেয়ে গেল।
২. যে কাউকে ধর্ষণের জন্য একিউজ করা সম্ভব। যদি সে নাও করে থাকে তখন তাকে এর জন্য এখন প্রাণ হারাতে হতে পারে, যা তার জীবনে কাম্য নয়।
এক্ষেত্রে দুই নাম্বারে যদি ভুলবশত কারো কল্লা কর্তন বা ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলা হয়, তাহলে তার উত্তর রাষ্ট্র বা সমাজ কাকে দেবে? অর্থাৎ ফলসলি একিউজড মানুষের জীবন হারানোর কোনো দায় ছিল না, এটা তার জীবন হারানোর পরে বুঝলে হলে কী হবে? আর এক নাম্বার নিয়েও কথা বলা যাক। এক্ষেত্রেও এই শাস্তির আইন মূলত কোনো লাভ আনতে পারল না। কেননা ধর্ষক তো ছাড় পেয়ে গেল, এখন সে আপনাকে মূলা দেখিয়ে ঘুরে বেড়াবে আর আপনি নিজ অন্ধত্বে হাবুডুবু খাবেন।
তো এই ব্যাপারে সমাধান কী? মৃত্যুদণ্ড না দিলে কীভাবে ধর্ষণের সমাধান হবে? বিশ্লেষকদের উত্তর – ধর্ষণ যেন হতেই না পারে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা। অর্থাৎ একজন পুরুষ পোটেনশিয়াল রেপিস্ট হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায় যদি ছোটবেলা থেকে তাকে লৈঙ্গিক ক্ষমতার শিক্ষা না দেওয়া হয়। অর্থাৎ “পুরুষ বীর্যবান”, “পুরুষের সামর্থ্য সিংহের মতো”, “পুরুষের লিঙ্গ পেলেই নারীরা সন্তুষ্ট”, “পুরুষের বিবাহসূত্রে বা বিবাহ বহির্ভূত সূত্রেও নারীদেহের উপর লৈঙ্গিক অধিকার আছে”, “পুরুষ কাঁদতে পারবে না, কেননা কান্নাকাটি করা দুর্বল নারীর স্বভাব” – এই ধারণাগুলো অবচেতন মনেও একজন শিশুকে শেখানো যাবে না। লিঙ্গ যে কেবল একটি প্রজনন যন্ত্র, সৃষ্টির মর্মে রচিত সর্বশক্তিমান কোনো ব্রহ্মাস্ত্র নয়, এটা শেখানোও খুব গুরুত্বপূর্ণ। লিঙ্গ একটি অঙ্গ, এটি কারো ওপর কোনো অলিখিত অধিকার নিশ্চিত করে না, এটাও বোঝানো দরকার। আর “লিঙ্গের প্রতি নারী তৃষ্ণার্ত” জাতীয় ন্যারেটিভও পুরোপুরি বাদ দিয়ে দিতে হবে। এগুলো করলেও নিশ্চয়ই আপনি কোনো ইউটোপিয়ান সমাজ গড়ে তুলতে পারবেন না, তবে হয়তো ধর্ষণ কমিয়ে আনতে পারবেন। এগুলো নিশ্চিত করতে পারলে এরপরও যখন কিছু ধর্ষণ হবে তখন অপরাধীদের স্যানিটাইজ করার বিবেকী প্রচেষ্টা চালানোর ব্যাপারে প্রগতিশীল মানুষরা একমত। অপরাধীকে শেখাতে হবে, মেন্টাল কাউন্সেলিং করে অপরাধমুক্ত জীবনে ঢোকার সম্ভাবনা তৈরি করতে হবে। তাকে হাজতে ভরে সাদাকালো স্ট্রাইপের ড্রেস পরিয়ে চব্বিশ ঘন্টা পুলিশি নির্যাতন করে আপনি তার সুস্থ মন গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারবেন না। তার মজ্জাগত অসুস্থ ধারণাকে সুষ্ঠু উপায়েই উচ্ছেদ করতে হবে। তাহলেই সমাজে ধর্ষণজনিত রোগের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব।
বাংলাদেশের প্রতিটি হিউম্যান রাইটস একটিভিস্টের মত অনুযায়ী, আপনি যে সকল গুরুতর শাস্তির কথা এত দিন আমলে নিয়েছেন, সেগুলো যে সমস্যারই অংশ — এটা আপনাকে মেনে নিয়েই এগোতে হবে। ফেসবুক স্ট্যাটাসে আবেগ জর্জরিত আঙুলে “ওর ফাঁসি চাই, ব্রাশফায়ার করা হোক” এগুলো বলে আপনি শুধু আপনার রাগ ঝাড়ার কাজটাই করছেন, কাজের কাজ কিচ্ছু হচ্ছে না। সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার কথায় ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠা জনগণের মধ্যেও ধর্ষক থাকতে পারে, এটা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার অনুভূতি তাড়িত কথাকে আড়ালে আবডালে গরুর রচনা ভেবে কৌতুক করার সুযোগ তাদের দেবেন না। বরং নারীর প্রতি সম্মান সূচক কথাবার্তা বলতে শেখাটা ও সম্মান করাটাই ধর্ষকের জন্য শাস্তি, যেহেতু সে বিশ্বাস করে নারীর প্রতি প্রতিহিংসার প্রতিক্রিয়ায় একজন নারীকে ধর্ষণ করতে পারলেই সে নারীর সম্মানহানি ঘটবে, সে আর মাথা তুলে সমাজে দাঁড়াতে পারবে না। আপনার শিশুকে শেখান, “ধর্ষিত হলে সেটা সম্মানহানি নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন”। সবাই নারীকে ধর্ষণ হবার পরও একজন মানুষ হিসেবে সম্মান করতে শিখলে ধর্ষকের “ছুঁয়ে সম্মান কেড়ে নেব” জাতীয় দর্শন ধোপে টিকবে না। ফলশ্রুতিতে একজন ধর্ষিত নারীও মাথা উঁচু করে একসময় চলতে শিখবে। আর লেখার শুরুতে ভিকটিমের প্রতি যে ন্যায়বিচারের বিস্তারিত আলাপ করেছিলাম, এটা তারই শেষাংশ। একজন ভিকটিমকে সমাজে মানুষ হিসেবে সম্মান নিয়ে জীবন অতিবাহিত করার সুযোগ দেয়াই তার প্রতি ন্যায়বিচার। তাই রাজদণ্ডকে ‘না’ বলুন, ধর্ষণকে ‘না’ বলুন, পরাধীনতাকে ‘না’ বলুন, মৃত্যুর উল্লাসকে ‘না’ বলুন।
পরিশেষে, ভাবুন এবং ভাবতে শেখান। হাত নয়, বিবেক কাজে লাগান।