আ লো চ না – ব ই
তানজিনা তাবাস্সুম নোভা
এই প্রজন্ম বই পড়ে না, এরা যেসব বই লেখে সেগুলোর মানও যাচ্ছেতাই — আমাদের নিয়ে বড়দের অভিযোগের শেষ নেই। অভিযোগগুলোর কিছুটা সত্যতা অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু তাই বলে এ প্রজন্মের লেখকেরা যে ভালো বই একেবারেই লিখছেন না, এমনও নয়। তাঁরা যে কত বিচিত্র বিষয় নিয়ে নিজেরা পড়েন, আর তেমন বিষয় নিয়ে বইও লেখেন, সেসব জানতে হলে বইগুলো পড়ে দেখা দরকার। তেমন কিছু বইয়ের খোঁজ নিয়েই আজকের লেখাটি।
বিভং, নাবিল মুহতাসিম
গল্পের মূল চরিত্র রূপম কাজী ওরফে রূপু, অল্প কয়দিনের মধ্যেই যার বাংলাদেশের প্রথম নভোচারী হিসেবে মহাকাশ অভিযানে যাওয়ার কথা। এর মধ্যেই একদিন ঘুম থেকে উঠে সে নিজেকে আবিষ্কার করে একটি পরিত্যক্ত ভবনে, একটি লাশের পাশে। খুনের দায়ে ফেঁসে গিয়ে তার আর মহাকাশ যাত্রা না-ও হতে পারে। আবার, স্নায়ুযুদ্ধে লিপ্ত দুই দেশ, আমেরিকা আর রাশিয়ার নভোচারীরা কী গোপন মিশন নিয়ে রওনা দিয়েছে, সেটাও জানে না রূপু। এতসব বাধা ঠেলে তার আশৈশব লালিত মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে কি না, তা জানতে হলে বইটি পড়তে হবে।
বিভং বেশ উপভোগ্য একটি সায়েন্স-ফিকশন থ্রিলার। লেখকের লেখার ধরন সাবলীল, মনে হয়েছে রূপু নামের চরিত্রটা আমার সামনে বসেই গল্প করছে। লেখকের রসবোধের পরিচয়ও বইটিতে বেশ ভালোভাবে পাওয়া গেছে। বইয়ের নামসহ পুরো বই জুড়ে কাহিনীর প্রয়োজনেই অজস্র গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, সিনেমার রেফারেন্স এসেছে। এই ব্যাপারটা খুব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে বইয়ের নামের সূত্রটা লেখক নিজেই যখন ধরিয়ে দিলেন, তখন বেশ চমৎকৃত হয়েছি।
সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ, সুহান রিজওয়ান
স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর জীবদ্দশায় যেমন বঙ্গবন্ধুর প্রবল ব্যক্তিত্বের ছায়ায় ঢাকা পড়ে ছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পরেও অনেকটা তা-ই ঘটেছে। তাঁর নিজের মেয়েদের লেখা বইগুলো ছাড়া তাঁকে নিয়ে লেখা ভালো মানের, তথ্যবহুল বইয়েরও অভাব আছে। সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ এই অভাবের বেশ খানিকটা পূরণ করেছে।
পূর্ব খণ্ড আর উত্তর খণ্ডে বিভক্ত এই উপন্যাসটিতে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রায় একা হাতেই তাজউদ্দীনের সরকার সামলানো, ঘরে-বাইরে শত্রুদের ষড়যন্ত্র থেকে সব দিক আগলে রাখা, যুদ্ধ পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি, তাঁর মৃত্যু — এ সবই উঠে এসেছে। সুহান রিজওয়ানের এটি প্রথম প্রকাশিত বই হলেও তাঁর ভাষার ব্যবহার, বর্ণনাভঙ্গি প্রতিষ্ঠিত লেখকদের সাথে পাল্লা দেওয়ার মতো। তাছাড়া এ বইয়ে আমার আরেকটি প্রিয় দিক হলো এর অধ্যায়গুলোর কাব্যিক নাম।
সব মিলিয়ে একটি ভালো বাংলা উপন্যাস যাঁরা পড়তে চান, সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ তাঁদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।
রাধেয়, মাহমুদুর রহমান
মহাভারত-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়েও কর্ণ কিছুটা উপেক্ষিত, কিছুটা লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যান তিনি। রাধেয় উপন্যাসটিতে কর্ণের জবানিতে তাঁর জীবনকাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
কর্ণের দৃষ্টিকোণ থেকে মহাভারত-কে দেখতে পাওয়া নিঃসন্দেহে একটি দারুণ অভিজ্ঞতা। মাহমুদুর রহমানের প্রথম বই মোগলনামা পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর ঝরঝরে, প্রাঞ্জল লেখার সাথে পরিচিত ছিলাম। কিন্তু এই বইয়ে এসে গল্পের গাম্ভীর্য ধরে রাখতেই তিনি কিছুটা তৎসম শব্দ-প্রধান ভাষা ব্যবহার করেছেন। সে কারণে এই ভাষায় অনভ্যস্ত কারো হয়তো বইটি পড়তে একটু কষ্ট হতে পারে, তবে পাঠকের একেবারে না বোঝার মতো ভাষাও তিনি ব্যবহার করেন নি। সব মিলিয়ে বইটি সুখপাঠ্য। ভারতীয় পুরাণে যাদের আগ্রহ আছে, তাদের অবশ্যই এই বই পড়তে ভালো লাগবে।
নীল পাহাড়, ওবায়েদ হক
নিভৃতচারী, বন্ধু-স্বজনহীন মানিক মিত্র পেশায় একজন চিকিৎসক। ১৯৮৪ সালে দেশে সামরিক শাসন চলাকালীন ক্ষমতাশালী একজনের কুকর্মের প্রতিবাদ করার শাস্তিস্বরূপ তাকে বদলি হয়ে বান্দরবানের গহীনে চলে যেতে হয়। পাহাড়ে তখন অস্থিতিশীল অবস্থা। পাহাড়ি আর সেটলারদের পস্পরের প্রতি অবিশ্বাস, ঘৃণা সবই ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। পাহাড়ে মানিকের বিচিত্র ধরনের অভিজ্ঞতা হয়, যেখানে অনেকে যেমন তাকে প্রচণ্ডরকম ঘৃণা করে, তেমনি হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসার মতো মানুষও আছে যথেষ্ট।
এই বইয়ে লেখক শুধু একটা গল্প বলে গেছেন। পাহাড়ে কেন, কী কারণে এমন অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে, লেখক এই প্রশ্নের কোনো উত্তর বা এই সমস্যার কোনো সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেন নি। এবং, এই গল্প বলায় তিনি সফল। নীল পাহাড় দারুণ সুলিখিত একটি উপন্যাস। পুরো বইটি পড়ার সময়ই মানিক চরিত্রটিকে আমার ভীষণ আপন বলে মনে হচ্ছিল। একই সাথে অন্য ছোট ছোট চরিত্রগুলো, আর তাদের গল্পগুলোও মন ছুঁয়ে গেছে।
ভেন্ট্রিলোকুইস্ট, মিনিমালিস্ট, মাশুদুল হক
হাল আমলের বাংলা থ্রিলার বইয়ের খবর রাখেন, অথচ এই দু’টো বইয়ের নাম শোনেন নি, এমন পাঠক পাওয়া সম্ভবত মুশকিল হবে। অনেকটা ড্যান ব্রাউন স্টাইলে লেখা থ্রিলার দু’টোর মূল চরিত্র দুই বন্ধু – নৃতত্ত্বের শিক্ষক মারুফ এবং সাংবাদিক রুমি।
ভেন্ট্রিলোকুইস্ট গল্পে এক বন্ধুর বিয়ে উপলক্ষে পুরোনো বন্ধুদের দেখা হয়। কথা প্রসঙ্গে মারুফ আর রুমি জানতে পারে — তাদের আরেক বন্ধু শওকত, অসুস্থতার কারণে যার কথা বলতেই কষ্ট হতো, সে এখন একজন পেশাদার ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। কৌতূহলী হয়ে শওকতের শো দেখতে গিয়ে তারা আরো গভীর কোনো রহস্যের আঁচ পায়।
মিনিমালিস্ট এর ঘটনা প্রথম বইয়ের চার বছর পরের। গল্পের শুরুতে এক খুনের ঘটনার রিপোর্ট করতে গিয়ে রুমি আর মারুফ জড়িয়ে পড়ে এক অদ্ভুত রহস্যের সাথে। প্রাচীন সেই রহস্যের সমাধান করতে গিয়ে তারা জানতে পারে ভারতীয় উপমহাদেশ এক বিরাট বিপদের সম্মুখীন, সেই বিপদ থেকে ভারতীয় উপমহাদেশকে বাঁচাতে তারা ছুটে চলে।
দু’টো বই-ই থ্রিলার হিসেবে চমৎকার। থ্রিলারের মধ্যে যে টান টান ব্যাপারটা পাঠক সচরাচর আশা করে থাকেন, তা এই বইগুলোর মধ্যে বেশ ভালোভাবে আছে। এছাড়া রহস্যের সাথে ধর্ম, ইতিহাস, চিকিৎসাবিজ্ঞান, স্থাপত্য, এসব বিষয়ের যোগ থাকায় বইগুলো আরো উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। ভেন্ট্রিলোকুইস্ট লেখকের প্রথম বই হওয়ার কারণে এই বইয়ের লেখার ধরনে কিছুটা জড়তা দেখতে পাওয়া যায়, মিনিমালিস্ট-এ তা অনেকাংশেই অনুপস্থিত।
ত্রিশ লক্ষ শহিদ: বাহুল্য নাকি বাস্তবতা, আরিফ রহমান
ট্রিগার ওয়ার্নিং: ধর্ষণ ও নির্যাতনের বর্ণনা
মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। এত কম সময়ে এত বেশি মানুষকে হত্যা করা সম্ভব নয়, বঙ্গবন্ধু ভুল করে শহিদের সংখ্যা তিন লাখের জায়গায় ত্রিশ লাখ বলে ফেলেছিলেন — এমন সব কথা বহু বছর ধরেই প্রচলিত। এই বইয়ে তথ্য প্রমাণ দিয়ে সেসব বিতর্কের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। লেখকের পড়াশোনা ও গবেষণা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। কারো মনে মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ থাকলে এ বইটি তাঁদের পড়া উচিত। তবে বইয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ছোট ছোট বেশ কিছু ঘটনার কথা আছে, অনেক পাঠকের হয়তো সেসব সহ্য করতে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে সেসব অধ্যায় এড়িয়ে যাওয়াই ভালো হবে।
এবার বইটির কিছু খারাপ দিকের কথা বলি। গুরুত্বপূর্ণ একটি বই হলেও বইটি খুব সুলিখিত নয়। এছাড়া বইয়ের অনেক ছবি ও গ্রাফ ঠিকমতো পড়া/বোঝা যায় না, এরকম একটি বইয়ে যা খুব বেশি প্রয়োজন। বইটি দেখে মনে হয়েছে, লেখকের ব্লগের লেখাই কপি পেস্ট করে তুলে দেওয়া হয়েছে। সেজন্য জায়গায় জায়গায় বইটিকে বেশ অগোছালো মনে হয়।
দশগ্রীব, সিদ্দিক আহমেদ
শতাব্দী-প্রাচীন এক পুঁথি আবিষ্কারের সাথে সাথেই খুন হয়ে গেলেন প্রখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক অধ্যাপক কামরুল শরীফ। সেই পুঁথিও সাথে সাথেই হাওয়া। কী ছিল সেই পুঁথিতে, কেন এর জন্য তাঁকে খুন হতে হলো, এই রহস্যের সমাধান করতে মাঠে নামে তাঁর দুই ছাত্র-ছাত্রী রাশাদ ও জয়িতা। এদিকে শুধু তারাই নয়, একই পুঁথির খোঁজ করে চলেছে হাজার বছরের পুরোনো এক গুপ্ত সংগঠন।
বইয়ের নাম দেখেই অনেকের বুঝে ফেলার কথা, এই কাহিনীর সাথে রামায়ণ-এর, বিশেষত রাবণের কোনো যোগ আছে। সেই যোগসূত্রটি কী, তা বই পড়লেই জানা যাবে। তবে এই বই পড়ার পর পাঠক রাবণকে পুরোপুরি ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা শুরু করবেন, এটুকু মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। রামায়ণ-এর এই বিনির্মাণ (Deconstruction) আমি দারুণ উপভোগ করেছি। একইসাথে দশগ্রীব থ্রিলার হিসেবেও চমৎকার। সাসপেন্স, থ্রিল কোনোটারই কমতি নেই বইটিতে।
পদতলে চমকায় মাটি, সুহান রিজওয়ান
সমর কুমার চাকমা ঢাকা শহরে আসে তার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে। আরো আছে দুই বন্ধু আরিফ আর হিমেল। হিমেল বেশ পড়ুয়া, রাজনীতি সচেতন। আরিফ মোটামুটি নিষ্পৃহ, তেমন সচেতন নয়। এরাই উপন্যাসের মূল চরিত্রগুলো। একটি গবেষণার কাজে পাহাড়ে গিয়ে আরিফ আর হিমেল নিজেদের চোখে অনেক কিছু দেখে, তাদের অনেক পুরোনো ভুল ভেঙে যায়।
এই বইটি আমার মতো এই প্রজন্মের গা বাঁচিয়ে, ঘরে বসে ফেসবুক স্ক্রল করে চলা মানুষদের জন্য একটি কঠিন চপেটাঘাত। এই বই পাঠককে ধাক্কা দেবে, অস্বস্তিতে ফেলবে। লেখক এই প্রজন্মের মানসিকতা খুব ভালো ধরতে পেরেছেন বলেই আরিফ আর হিমেলের মাঝে এই প্রজন্মের পাঠক নিজেকে খুঁজে পায়।
লেখকের প্রথম উপন্যাস সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ এর মতো কিছু যদি কোনো পাঠক এই বই থেকে আশা করেন, তাহলে ভুল করবেন। পদতলে চমকায় মাটি সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের একটি বই। আর আমার মনে হয়, বিষয়বস্তুর বিচারে এই বইয়ের কিছুটা চাঁছাছোলা ভাষার ব্যবহারটা যথার্থই হয়েছে।
তরুণ প্রজন্মের এই লেখকদের বইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ইতিবাচক দিকটি হচ্ছে, বই লেখার আগে এঁদের প্রায় সবাই-ই নিজেরা যথেষ্ট পরিমাণে পড়ছেন, বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে গবেষণা করছেন, তারপর লিখছেন। এবং, প্রয়োজনীয় পড়াশোনা শেষ করে, গুছিয়ে বই লেখার কারণে তাঁদের কেউ কেউ এক একটি বই লিখতে কয়েক বছর করে সময়ও নিচ্ছেন।
একইসাথে এই বইগুলোর সবচেয়ে নেতিবাচক দিকটির কথাও না বললেই নয়। আমার উল্লেখ করা মোট নয়টি বইয়ের মধ্যে দু’টি ছাড়া আর সবগুলো বইতে অস্বাভাবিক, অতিরিক্ত রকমের বানান ভুল রয়েছে। একজন পাঠকের জন্য এই ব্যাপারটি বেশ পীড়াদায়ক। একটি বইয়ের প্রতিটি পাতায় যদি ‘কি’ ও ‘কী’ এর পার্থক্য না করা, ‘পরা’ ও ‘পড়া’ এর ব্যবহারে ভুল করা, ‘ই’ ও ‘য়’ কে গুলিয়ে ফেলা, ‘সে’ ও ‘তিনি’ এর ধারাবাহিকতা রক্ষা না করা — এই ধরনের সাধারণ বানানগুলোও ভুল থাকে, তাহলে একজন পাঠকের পক্ষে মনোযোগ ধরে রাখা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। শুধু এই বইগুলোই নয়, সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত অধিকাংশ বইয়ের ক্ষেত্রেই এই কথাটি সত্য। বইগুলোর প্রচ্ছদ চমৎকার, কাগজ ও বাঁধাইয়ের মানও ভালো, তাহলে শুধু বানানের ক্ষেত্রেই এই অবহেলা কেন?
আমার উল্লিখিত বইগুলো ছাড়াও তরুণ লেখকদের লেখা আরো অনেক চমৎকার বই রয়েছে। সবগুলো বইকে এক লেখায় স্থান দেওয়া সম্ভব হয় নি বলেই সেসব বই বাদ পড়েছে। আশা করছি, আগ্রহী পাঠকেরা নিজেরাই সেসব বইয়ের খোঁজ করে পড়তে উৎসাহিত হবেন।
লেখক দ্য ঢাকা অ্যাপোলোগ এডিটোরিয়াল টিমের একজন সদস্য।