ছো ট গ ল্প
সানিম সুবাহ
বাসস্ট্যান্ড থেকে নেমেই ঘড়ি দেখল রিয়া। দশটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট। আজ একটু বেশিই দেরি হয়ে গেল ফিরতে। কিন্তু অফিসে এতো কাজ জমে ছিল, শেষ না করে আসা মানে আরেক রাতের ঘুম অফিসেই ফেলে আসা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এত রাতে একা বাসায় ফেরার চাইতে সেটাও ঢের ভালো ছিল।
সাত-পাঁচ ভাবা বন্ধ করে জলদি পা চালাল রিয়া৷ তার বাসা এখান থেকে মাত্র পনেরো মিনিটের পথ, রিকশায় গেলে আরও কম, কিন্তু এই সময়ে কোনো রিকশাই এতটুকু রাস্তা যেতে চায় না। অগত্যা, পা দুটোই ভরসা। রিয়া একমনে হাঁটতে থাকল।
আউউউউউ…
আঁতকে উঠল রিয়া, হোঁচট খেয়ে পড়েই যাচ্ছিল আরেকটু হলে। এই রাস্তার কুকুরগুলোও না! কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ এমনভাবে ডাক দেয় যে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়। একটু ধাতস্থ হয়ে আবার হাঁটতে শুরু করবে, এমন সময় রিয়া আওয়াজটা শুনতে পেল, দূরে কেউ তার নাম ধরে ডাকল নাকি? কার যেন পায়ের শব্দও শোনা যাচ্ছে মনে হলো। কিছুক্ষণ আগের ভয়টা দ্বিগুণ শক্তিতে ঘিরে ধরল রিয়াকে। পেছন ফিরে তাকানোর ইচ্ছেটা অনেক কষ্টে দমিয়ে রাখল সে। কিন্তু পায়ের শব্দটা ধীরে ধীরে আরও স্পষ্ট হচ্ছে।
হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল সে। বাজে চিন্তাটা মন থেকে যতটা সম্ভব সরানোর চেষ্টা করল। এই তো, আর একটা গলি পেরোলেই তার বাসা দেখা যাবে। আর পাঁচটা মিনিট। এরপরই সে বাড়ি পৌঁছে যাবে। সাকিব নিশ্চয়ই বাইরের ঘরে বসে চিন্তা করছে তার এত দেরি হচ্ছে কেন। সাকিবের কথা ভাবতেই ভয়টা একটু কমে গেল৷ ব্যাগেই ফোনটা রাখা আছে। সেটা বের করে কল দিলেই ও এগিয়ে আসবে।
“রিয়া আফা!”
এবার সত্যিই পড়ে গেল রিয়া। এতসব চিন্তা করতে করতে পায়ের শব্দটা কখন যে আরও কাছে চলে এসেছে টেরই পায় নি এসে। আতঙ্কে তার সারা শরীর কেঁপে উঠল। প্রাণপণে ওঠার চেষ্টা করছে রিয়া, কিন্তু তার হাত পা যেন অসাড় হয়ে গেছে। পায়ের শব্দটা এগিয়ে এসে এবার একদম তার পাশে এসে দাঁড়াল।
“আয় হায়! পড়লেন কেমনে? আমনে ঠিক আছেন তো আফা?”
গলার স্বর শুনে এবার ভালো করে লোকটার দিকে তাকাল রিয়া। মোড়ের ডিপার্টমেন্ট স্টোরের সেলিম ভাই। সকালে নাস্তা মিস হলে এনার দোকান থেকেই কিছু একটা কিনে নেয় রিয়া।
“সেলিম ভাই,” দুর্বল কণ্ঠে বলল রিয়া, “আপনি, এত রাতে?”
“দোকান বন্ধ কইরা আইতেসিলাম, আফা। আমনেরে দেখলাম দৌঁড়ায় দৌঁড়ায় যাইতেছেন, তা কতবার ডাকলাম, আমনে ফিরলেনই না। গলা উঁচায় ডাকতেই পইড়া গেলেন। ব্যথা ট্যথা পান নাই তো, আফা?”
সেলিম ভাইয়ের কথায় রিয়ার খেয়াল হলো যে সে এখনো মাটিতেই বসে আছে। জামার ধুলা ঝাড়তে ঝাড়তে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াল সে।
“আমি ঠিক আছি, সেলিম ভাই। আপনি তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন।”
“কী যে কন, আফা। ভয় পাওয়ার কী আছে? আমি কি বাঘ না ভাল্লুক?”
ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রিয়া। এই শহরে অন্ধকার হলেই কেন যে ভয়টা বেড়ে যায়, সেলিম ভাইকে সেটা বলল না সে। সেলিম ভাই কী বুঝলেন কে জানে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “আফা চলেন, আমনেরে বাসা পর্যন্ত আগায় দেই।”
বলে এগিয়ে গেলেন তিনি। রিয়া আর কথা না বাড়িয়ে তার সাথে হাঁটতে লাগল।