ম তা ম ত
তানজিনা তাবাস্সুম নোভা
ওয়েবসিরিজ ঊনলৌকিক এর মধ্যে অনেকেরই দেখা হয়ে গেছে। সিরিজটির দারুণ চিত্রনাট্য কিংবা যথাযথ আবহসঙ্গীত কিংবা কীভাবে ইন্তেখাব দিনার তাঁর প্রায় ২০ মিনিটের মনোলোগে দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখলেন কিংবা চঞ্চল চৌধুরী আর নুসরাত ইমরোজ তিশা একটা রুমের ভেতর শুধু বাক্যবিনিময় করেই কীভাবে একটা টেনশন সৃষ্টি করে ফেললেন কিংবা ৫টি পর্বের মাঝে যেটি অনেকের কাছে তুলনামূলকভাবে কম ভালো মানের মনে হয়েছে, সেখানেও ইরেশ যাকের কী দুর্দান্ত অভিনয় করলেন—এসব নিয়ে এর মধ্যে বিস্তর কথাবার্তাও হয়ে গেছে। আমি আর সেদিকে যাব না। আমি মূলত কথা বলতে চাই শিবব্রত বর্মনকে নিয়ে, যাঁর লেখা গল্প থেকে এই অ্যান্থোলজি সিরিজটি তৈরি করা হয়েছে।
শিবব্রত বর্মনের সাথে আমার পরিচয় ২০০৬/০৭ সালের দিকে, ইয়ান মারটেলের বিখ্যাত Life of Pi উপন্যাসের অনুবাদ পাইয়ের জীবন পড়ার মাধ্যমে। বহু বছর পরে এসে মূল বইটি পড়ার পর বুঝতে পেরেছিলাম ঐ অনুবাদ কী প্রাঞ্জল, কী সাবলীল ছিল।
ঐ পর্যন্তই। এরপর মাঝে মাঝে বিভিন্ন পত্রিকা বা ম্যাগাজিনের পাতায় তাঁর গল্প টুকটাক পড়া হলেও তাঁর লেখা আর কোনো বই আমার চোখেও পড়েনি, পড়াও হয়নি। শেষমেশ ২০১৯ সালের বইমেলায় প্রকাশিত গল্প সংকলন বানিয়ালুলু দিয়ে শিবব্রত বর্মনের লেখা কোনো বই আবার পড়া হলো। সায়েন্স ফিকশন আর ফ্যান্টাসির মিশেলে রচিত এই গল্পগুলোর বিষয়বস্তু দারুণ বৈচিত্র্যময়। কোনোটিতে বলা হচ্ছে মানচিত্রে নেই এমন একটি দেশ নিয়ে, আবার কোনোটিতে কথা হচ্ছে দুই জগতের দুই শিল্পীর মিলিতভাবে একটি ছবি আঁকা নিয়ে, আরেকটিতে আবার কথা হচ্ছে এমন একটি বাগান নিয়ে যার টিকে থাকা না থাকার ওপর জগতের অস্তিত্ব নির্ভর করছে। গল্পগুলোর কোনো কোনোটি আবার গল্পের মতো না করে প্রবন্ধের মতো করে লেখা হয়েছে। নিরীক্ষাধর্মী লেখা আমার ব্যক্তিগতভাবে খুব পছন্দ, তাই আমি এসব গল্প খুব উপভোগ করেছি। গল্পগুলোর ‘ওপেন এন্ডিং’ ছিল বাড়তি পাওনা। আগ্রহীদের জানিয়ে রাখি, ঊনলৌকিক এর দু’টো পর্ব এই বইয়ের দু’টো গল্প থেকে তৈরি করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে, বানিয়ালুলু-র গল্পগুলো, বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত গল্পগুলো পড়ে আমার যা মনে হয়েছে, শিবব্রত বর্মনের লেখাগুলো পাঠকের মনের খোরাক জাগাতে খুব ভালোভাবে সক্ষম। আর এরকম লেখার যে আজকাল কী আকাল, তা সচেতন পাঠক মাত্রই জানেন। অথচ, লেখক হিসেবে এই ভদ্রলোক প্রচণ্ডরকম আন্ডাররেটেড। বড় বড় বইয়ের দোকানগুলোতে বানিয়ালুলু আর অল্প কয়েকটি অনুবাদ গ্রন্থ ছাড়া তাঁর লেখা আর কোনো বই সচরাচর চোখে পড়ে না। দেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন বুকশপেও তাঁর লেখা অনেক বই (আমি যেগুলোর খোঁজ পেয়েছি তাদের মধ্যে) নেই। অথচ আরো বেশ কিছু বই তিনি লিখেছেন।
শিবব্রত বর্মন যে ধরনের গল্প লেখেন, বাংলায় খুব বেশি লেখক সে ধরনের গল্প লেখেন না। আমার মনে হয়, এই লেখকের প্রতি আমাদের আরেকটু বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। এই মনোযোগ তাঁর যথার্থই প্রাপ্য। অন্তত, আমার মতো যারা তাঁর লেখা আরো বেশি পড়তে চায়, তাদের জন্য বইগুলো সহজলভ্য করার জন্য হলেও এটা করা উচিত।
লেখক টিডিএ এডিটোরিয়াল টিমের একজন সদস্য।