অণুগল্প: ইদ ও প্রতীক্ষিত আপনজন

Editor
4 Min Read

তাসনিম জারিন অধীরা


আরেক গোধূলির লগ্ন পেরিয়ে চলল। সুপ্রভার হাতে করে চায়ের পেয়ালা পৌঁছে গেল সকলের ঘরে। আব্বা আম্মা একসাথে বসে চা খাবেন আর সাংসারিক আলাপচারিতা করবেন। সেই প্রথম দিন থেকেই এই জিনিস দেখে এসেছে সে, তার বেশ ভাল লাগে। হয়তো বা যৌবন ফুরিয়েছে, সংসারের দায়িত্বের ভারে ঢাকা পড়েছে পুরোনো জৌলুশ। কিন্তু কিছু অভ্যাসের মাঝে হয়তো তারা নিজেদের নিজেদের মতো করে ফিরে পান, সেই আগের মতো। 

তা বৌমা, শুভ কবে ফিরবে কিছু বলল নাকি?”

না, মা। গতদিন বলেছিল জানাবে।” 

তোমার ছেলের এই এক কথা। জানাবে‘, ইদের আছে আর কয়দিন? সপ্তাহ শেষেই ইদ আর সে এখনও ঠিক করে বলে না।” 

ছেলে তো শুধু মনে হয় আমার একার। তোমার যখন এতই জানতে ইচ্ছে হচ্ছে নিজেই একটা ফোন দিয়ে দেখো না।” 

ওসব ফোন-টোন আমি দিতে পারব না ৷ বৌমা, তুমি দিও তো।” 

আচ্ছা, বাবা। কথা বলব নে আমি। আমি সাজিকে চা দিয়ে আসি।” 

হ্যাঁ, যাও। দেখো তো তোমাকে কিছু বলে কি না। আসার পর থেকে দরজা এঁটে বসে আছে। আমাকে তোহ কিছুই বলবেনা। তুমি একটু দেখো তো। কী জানি শ্বশুর বাড়িতে কিছু হল কি না। “

আচ্ছা মা, আমি দেখছি। মনে হয় না তেমন কিছু। সাজি তো সবসময়ই নিজের রুমে থাকতে পছন্দ করত, এতদিন বাদে এসেছে, তাই হয়তো নিজের মতো থাকছে।” 

হ্যাঁ, তা ঠিক বলেছ।” 

সাজি এসেছে বহু দিন পর, তাকেও সময় দেওয়া জরুরি। হয়তো বা কত গল্প কত মুহূর্ত ভাগাভাগি করার আছে তার। 

সাজি, চা নিয়ে এসেছি।” 

গলা শুনে দরজা খুলে দিল সাজি৷ 

এসো, ভাবী।” 

তুমি দেখি আসার পর থেকে বের-ই হচ্ছো না রুম থেকে, কোন সমস্যা?”

আরে, না ভাবী। বসো। তেমন কিছুই না। বুঝোই তো ও বাড়িতে কি যেমন খুশি তেমন থাকা যায়? তাই নিজের রুমে নিজেকে সময় দিচ্ছিলাম।” 

মা তো চিন্তায় পড়ে গেলেন তোমার আবার কী হলো ভেবে।” 

আম্মা, সবসময়ই বেশি বেশি ভাবে।” 

আচ্ছা, তুমি চা খেয়ে নিও।”

তুমি বসবে না?”

রান্নাঘরে কাজ আছে যে এখন। শেষ করেই আসছি।” 

তুমি পারো-ও৷ সারাদিন অফিস করে এসব করছ, ভাইও তো নেই। খারাপ লাগে না তোমার?”

একটা মৃদু হাসি একে সুপ্রভা বলল, “তোমার ভাইকেও ফোন দিব যে।” 

তাই বলো।”

 

সারাদিনের কর্মব্যস্ততার ক্লান্তি  চায়ের এক চুমুকেই চলে যাবে, তাই দেরি না করে চা শেষ করতে না করতেই তার দৃষ্টি গেল জানালার বাইরে। রাতের আগমন ঘটছে, শুকতারাটা দেখা যাচ্ছে পশ্চিমা আকাশে। অদ্ভুত লাগে তার, কত দূরে থেকেও কত কাছে। হাতে মোবাইলটা নিয়ে চট জলদি একজনকে ফোন দিল সে।

বাড়ি কবে ফিরবে?”

 “এখনও জানি না।” 

সুপ্রভা কিছু না বলে এক দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। 

অপর পাশ থেকে শুভ বলল,

আচ্ছা, আমার জন্যে কি কিনলে?” 

কিনি নাই। নিজেই এসে কিনে নিও।” 

রেগে আছ?”

শোন, একটা টিয়া রঙের সুতি শাড়ি কিনেছি এবার। নীল পাড়। আমার জন্যে নীল চুড়ি নিয়ে আসবে।”

তুমি না শাড়ি পরো না?”

তোমাকে যেটা বললাম সেটাই করো।”

আচ্ছা, তোমার হাতের সাইজ তো জানি না।”

থাক, জানা লাগবে না। খেয়াল রেখো নিজের।”

 

ফোনটা কেটে দেওয়ার ঠিক কিছু সময় পরেই বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠল। সুপ্রভা দরজা খুলে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল শুভকে দেখে। 

আটটা বাজে মাত্র। দোকান খোলা পাব তো?”

 


লেখালেখি তাসনিম জারিনের কল্পনা জগতের একটা ছোটখাটো প্রকাশমাত্র। সে আড়ালে থাকা সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম সাধারণ জিনিস সবার সামনে তুলে আনার চেষ্টা করে এবং নিজেকে ‘চিত্রকল্পী’ হিসেবে আখ্যা দিতে পছন্দ করে।

Share this Article
Leave a comment