রেহনুমা অবন্তী
জন্মলগ্নে একজন শিশুর যৌনাঙ্গের ভিত্তিতে লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয়। তবে সেই ব্যক্তি পরবর্তীতে নিজেকে কোন পরিচয়ের আওতায় ফেলবে সেটা একান্তই তার সিদ্ধান্ত। লিঙ্গ ও যৌনতা বিষয়ক ভ্রান্ত ধারণাগুলো নিরসন করা প্রয়োজন। তাই বিভিন্ন লিঙ্গের মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিভিন্নতা সম্পর্কে তথ্য সমূহ উপস্থাপন করা হলো:
সেক্স (Sex):
ব্যাক্তির জননাঙ্গ, অভ্যন্তরীণ প্রজননতন্ত্র, সেক্স ক্রোমোজোম, হরমোনের প্রভাব ইত্যাদির ভিত্তিতে যে লিঙ্গ নির্ধারিত হয়, তা হল সেক্স। সেক্স সাধারণত তিন প্রকার।
• স্ত্রী (Female): জরায়ু, ক্রোমোজোম XX, উচ্চ মাত্রায় ইস্ট্রোজেন হরমোন ইত্যাদি বিদ্যমান।
• পুং (Male): পুং জননাঙ্গ, XY ক্রোমোজোম, উচ্চ মাত্রায় টেস্টোস্টেরন হরমোন ইত্যাদি বিদ্যমান।
• আন্তঃলিঙ্গ (Intersex): পুং কিংবা স্ত্রী জননাঙ্গের চেয়ে ভিন্নধর্মী জননাঙ্গ, যৌথ প্রজননতন্ত্র অথবা বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের বিপরীত প্রজননতন্ত্র, হরমোন ক্ষরণের মাত্রার বিভিন্নতা বিদ্যমান।
জেন্ডার (Gender):
কোন ব্যক্তি মানসিকভাবে নিজেকে যে লিঙ্গের কাতারে অন্তর্ভুক্ত করে কিংবা নিজস্ব লিঙ্গসংক্রান্ত অনুভূতি বুঝাতে যে পরিচয় নির্ধারণ করে, তাকে জেন্ডার বা লিঙ্গ বলে৷ জেন্ডারের ধরনের দিক থেকে খেয়াল করলে দেখা যায়, ব্যক্তিগত অনুভূতির ভিত্তিতে বিশ্বে বৃহৎ অঙ্কের জেন্ডার রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
• সিসজেন্ডার (Cisgender): ব্যক্তি জন্মসূত্রে প্রাপ্ত লিঙ্গ অনুযায়ী জেন্ডার বাছাই করে। যেমন পুরুষাঙ্গ-প্রাপ্ত ব্যক্তি নিজেকে পুরুষ পরিচয়েই সম্বোধন করে।
• রূপান্তরিত লিঙ্গ (Transgender): জন্মসূত্রে প্রাপ্ত লিঙ্গের সাথে দ্বিমত পোষণ করে নিজেকে অন্য জেন্ডারের আওতায় ফেলে। যেমন: ব্যক্তি পুরুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও নিজেকে নারী পরিচয়ে সম্বোধন করে। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিবর্গ জন্মসূত্রে নারী বা পুরুষ থেকে ভিন্নতা লাভ করে, কিংবা স্বেচ্ছায় নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন করে থাকে।
• জেন্ডার-ফ্লুয়িড (Gender fluid): ব্যক্তির কোন নির্দিষ্ট লিঙ্গ পরিচয় নেই। তারা যেকোন সময় যেকোন পরিচয় কিংবা জেন্ডার পরিচিতি ছাড়াই বেঁচে থাকতে ভালোবাসে।
সেক্সুয়্যালিটি (Sexuality):
বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই মানুষ বিভিন্ন লিঙ্গের প্রতি শারীরিক কিংবা মানসিক আকর্ষণ বোধ করে। আমাদের ভীষণ জোর দিয়ে শেখানো হয় যে এই আকর্ষণ শুধু বিপরীত লিঙ্গের প্রতি হওয়া বাধ্যতামূলক। তবে এসব সামাজিক বাধাধরার বাইরে তাকালে দেখা যায় ভালো লাগা কিংবা ভালোবাসা কোনো নিয়ম মেনে চলে না। তাই সমকামী ব্যক্তিবর্গের সম্পর্কের প্রতি, সর্বোপরি মানুষের অভিমতের প্রতি শ্রদ্ধা করা আমাদের মানবিক দায়িত্ব।
এ ভিত্তিতে সেক্সুয়্যালিটিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা সম্ভব। উল্লেখযোগ্য কিছু সেক্সুয়ালিটি হলো:
• হেটেরোসেক্সুয়াল (Heterosexual): যে ব্যক্তি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন।
• হোমোসেক্সুয়াল (Homosexual): যে ব্যক্তি নিজস্ব লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন বা সমকামী।
• বাইসেক্সুয়াল (Bisexual): যে ব্যক্তি নর ও নারী উভয় লিঙ্গের প্রতিই আকর্ষণ বোধ করেন।
• অ্যাসেক্সুয়াল (Asexual): যে ব্যক্তি সাধারণত যৌন সম্পর্কে জড়াতে অনিচ্ছুক অথবা যেকোন শারীরিক সম্পর্কে আকর্ষণ বোধ করেন না।
• প্যানসেক্সুয়াল (Pansexual): এ ধরনের সেক্সুয়্যালিটি তাদের নির্দেশ করে যারা একাধিক লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন। অথবা বলা যায়, ভালোবাসার ক্ষেত্রে কোন লিঙ্গই তাদের পথে বাধা হয়ে দাড়ায় না।
এমন আরও অনেক সেক্সুয়্যালিটি রয়েছে।
পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের মানুষ তাদের ভিন্নধর্মী পথ অনুসরণ করে বেঁচে থাকে। বিভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্নধর্মী বিশ্বাস ইত্যাদির মতো সম্পর্ক কিংবা আত্মপরিচয়ও ভিন্নধর্মী হওয়ার অধিকার রাখে। তাই লিঙ্গ ও সকল বাহ্যিক বৈষম্যের চক্র থেকে বেরিয়ে আমাদের মানুষকে মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধা করা উচিত এবং সব ধরনের মানুষ ও তাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান জানানো উচিত।
This post was created in collaboration with TransEnd and ProjectDebi.