রাহিন আমিন, জুয়াইরিয়া হক মাহী
ক্লাস সিক্সে যখন ইংলিশ পরীক্ষায় ‘নিউজপেপার’ বিষয়ে প্যারাগ্রাফ লিখতে হতো, তখন প্রথম লাইনটি লেখার আগে আপনার মাথায় কী আসত? আমার মাথায় আসত মধ্যবিত্ত ঘরের এক বাবার কথা, যিনি ছিমছাম পরিপাটি বাসার বারান্দায় রকিং চেয়ারে বসে চা খেতে খেতে পত্রিকা পড়ছেন সকালবেলা। দেখে মনে হচ্ছে, চশমা পড়া কাঁচাপাকা চুলের লোকটার জীবনে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই। যেন ঋতুপর্ণ ঘোষের সিনেমা থেকে উঠে আসে কোন দৃশ্যপট। আর এখন যখন ‘মিডিয়া’ শব্দটা উচ্চারণ করা হয়, তখন আপনার মাথায় প্রথমে কী ভেসে উঠে?
”ভাবনার বাথটাবে কেন কাকেরা গোসল করে”
এটি এই বছরের ১ এপ্রিলে দৈনিক প্রথম আলো-র অনলাইন বিনোদন পাতায় অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনার ছাদের পোষা কাকদের ব্যাপারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম। প্রকাশের প্রায় সাথে সাথেই স্ক্রিনশট নিয়ে ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়ে গেল। এর আগেও দৈনিক প্রথম আলো-র বিনোদন পাতার নানা প্রতিবেদন নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। দিনের পর দিন পর কেন প্রথম আলোর প্রচ্ছদের এক কোনায় নায়িকাদের ছবি প্রকাশিত হয়, সে বিষয়ে আগেও কঠিন সমালোচনার মুখে পড়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দৈনিকগুলোর একটি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাংবাদিকতার ধারণাকেই বদলে দিয়েছে। বিশ বছর আগেও সংবাদ ছিল মূলধারার সংবাদমাধ্যমের উপর নির্ভরশীল। এখন তা বদলে মানুষের উপর নির্ভরশীল। মোবাইল ফোনের ২০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা এবং ফেসবুকের ‘হোয়াটস অন ইওর মাইন্ড’ সঙ্গে থাকাতে এখন সবাই সাংবাদিক। ব্রেকিং নিউজ আগে টেলিভিশনের টিকারে পাওয়া যেত, এখন খবর জানতে ঢু মারতে হয় টুইটারে।
অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। এই পৃথিবীর চার বিলিয়ন মানুষ যখন কোন না কোন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারকারী, তখন পৃথিবীর সবকিছুই ফেসবুক-টুইটার-হোয়াটসঅ্যাপের উপরেই নির্ভর করার কথা। সাংবাদিকতাও তাই এখন সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিক।
আর হবেই বা না কেন? যেই খবর আগে হয়তো ৫ হাজার মানুষ পড়ত, শুধু ফেসবুকে শেয়ার করে সেই খবর এখন চলে যায় ১০ লাখ মানুষের টাইমলাইনে।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে সংবাদমাধ্যমের জন্য এর থেকে ভালো আর কিছুই হতে পারে না। সাংবাদিকদের কষ্টও এখন অনেকটাই কমে গিয়েছে। তাদের এখন আর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয় না। আগে যেই ইন্টারভিউ নিতে হয়তো এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতে হতো, এখন নিজের অফিসে বসে একটা হোয়াটসঅ্যাপ কলে-ই সবকিছু সেরে ফেলা যায়। এখন তাদের আর রাতভর প্রেসে বসে থাকতে হয় না, শুধু মোবাইলের স্ক্রিনেই আগের থেকে অনেক বেশি মানুষ সব খবর পড়ছে, জানছে।
কিন্তু ব্যাপারটা যে এতটা মধুর নয়, সেটা আসলে মুখে না বললেও বুঝতে কোন সমস্যা হয় না। চারপাশে ‘ফেইক নিউজ’ আর ‘ক্লিকবেইট’-এর ছড়াছড়ি তো আছেই, সাংবাদিকতার গড় মান নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠছে অহরহ। সংবাদমাধ্যমের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে গেছে অনেকটাই। আগে যেখানে সংবাদমাধ্যম বলতেই এ প্লেথোরা অফ ইনফরমেশন এন্ড নলেজ ধরনের কোন কিছুকে বোঝানো হতো, এখন তার বদলে মাথায় আসে মোবাইলে শেয়ার-ইটের নোটিফিকেশনের দৃশ্য – দেখুন গ্রামের মেয়ের পাগলা নাচ।
পাঠক চাহিদার উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা
সোশ্যাল মিডিয়া সাংবাদিকতাকে বদলে দিয়েছে সত্যি, কিন্তু সেই বদল সাংবাদিকতার লাভ বেশি করেছে নাকি ক্ষতি, সেই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দ্বিধায় পড়তে হয়। আগে মানুষ সংবাদমাধ্যমের উপর নির্ভরশীল ছিল। সংবাদমাধ্যম মানুষের মত গঠন করায় বিরাট ভূমিকা রাখত।
মানুষের চাহিদার উপরও সংবাদমাধ্যম নির্ভরশীল ছিল, কিন্তু আজকের মতো এতটা নয়। যেমন আগে, যেকোন সংবাদপত্রের কিছু নিয়ে কথা বলতে হলে বা সে বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা করতে হলে একজন পাঠককে অনেক ঝক্কির মধ্যে দিয়ে যেতে হতো। চিঠি লিখে, সেই চিঠি সংবাদপত্রে পাঠানোর পরেও সেটা প্রকাশিত হবে কি না – সেই বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা ছিল না।
এই একমুখী সাংবাদিকতার রূপ পাল্টে এখন সংবাদ বিষয়টিই দ্বিমুখী হয়ে পড়েছে। পৃথিবীতে আগে কখনোই মানুষ মতামত প্রকাশের এত বিশাল স্বাধীনতা পায় নি। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে কোনো সংবাদমাধ্যমের পেইজ একটি খবর শেয়ার করলে কোটি কোটি পাঠক সেই খবরের নিচে কমেন্ট করতে পারেন সহজেই।
যেকোন একটি খবর যদি পাবলিক সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে থাকে, যেমন বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যদি কোনো সংবাদমাধ্যম কওমি মাদ্রাসাগুলোর অনাচারের বিরুদ্ধে কোনো রিপোর্ট করে, তাহলে বেশিরভাগ মানুষই সেটা ভালোভাবে নেয়ার কথা না। এবং এই দেশের ক্ষিপ্ত ধর্মান্ধগোষ্ঠী যদি সেই সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে নিজস্ব প্রোফাইলে বিপুল লেখালেখি শুরু করে, তাদের পেইজ রাগান্বিত কমেন্টে ভাসিয়ে দেয়, তখন সেই সংবাদমাধ্যমের উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন চাপ তৈরি হয়। তারা সেল্ফ সেন্সরশিপে যেতে বাধ্য হয়।
এটি একটি কাল্পনিক উদাহরণ। বাস্তবেও সংবাদমাধ্যমগুলো এমন চাপের সম্মুখীন হয় প্রতিনিয়ত। এই কারণেই প্রথম আলো-র মতো সংবাদমাধ্যমও প্রতিনিয়ত নায়িকাদের ঘরের খবর প্রকাশ করে, কারণ অন্য খবরের চেয়ে সেটাই বেশি মানুষ পড়ে। এই দেশের বর্তমান বাজারে, শুধু এই দেশের নয়, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই সংবাদমাধ্যম কর্পোরেট বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভরশীল।
এই মন্দার বাজারে টিকে থাকতে হলে বিজ্ঞাপন লাগবেই, এবং যেই পত্রিকার যত পাঠক, তাদের বিজ্ঞাপন পাওয়ার সম্ভাবনা ততো বেশি। গণমানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে তো লাভ নেই, পত্রিকা শুধু পাঠকই হারাবে। তাই যেই খবর মানুষ বেশি পড়ে, সেই খবরই বেশি প্রকাশ করতে হয়। এবং প্রায় প্রতিটি সংবাদমাধ্যম সেটা করেও।
সোশাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম: সংবাদমাধ্যমের যম
খেয়াল করে দেখুন তো, আপনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে যতটুকু সময় দেন, তার মাঝে আসলে কতটুকু সময় মন দিয়ে কোন কিছু পড়েন?
সংবাদমাধ্যম যে এখন শুধু গণমানুষের চাহিদার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে তা নয়। আরো বিষয় আছে। মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিক হয়ে যাওয়াতে তারা এসব প্ল্যাটফর্মের স্ট্যান্ডার্ড কিংবা অ্যালগরিদমের উপরেও প্রচণ্ডভাবে নির্ভরশীল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেই অ্যালগরিদমগুলো সংবাদমাধ্যমের জন্য খুব একটা সুবিধার নয়।
আমরা সবাই সোশ্যাল মিডিয়ায় আসলে টানা স্ক্রল করার উপরেই থাকি। লাখ লাখ তথ্য আমরা পাশ কাটিয়ে যাই একটি স্ক্রলে, যতক্ষণ না কোন কিছু আমাদের মনোযোগ কেড়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে। আমাদের মনোযোগ কাড়ছে, এমন বিষয়ের মাঝে চটকদার জিনিসই বেশি। টাইমলাইনে একটি বিশ্লেষণধর্মী সংবাদের পাশাপাশি যদি একটি মিম সামনে আসে, বেশিরভাগ মানুষই তাদের সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী বিশ্লেষণটা পাশ কাটিয়ে মিমটির দিকে বেশি মনোযোগ দিবে।
তার মানে এই দাঁড়ায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের মনোযোগ কাড়তে চটকদার জিনিস বানানোর একটা আলাদা দায়িত্ব এখন সংবাদমাধ্যমের উপরে একা একাই পড়ে। পাঠকের মনোযোগ নিজেদের দিকে নিতে না পারলে যে তাদের খবর আরো লাখ লাখ কন্টেন্টের মাঝে চাপা পড়ে যাবে। তাই বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমই আমরা যাকে বলি কোয়ালিটি নিউজ, এখন তা বাদ দিয়ে চটকদার জিনিস তৈরি করার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে এবং দেয়াটাই স্বাভাবিক।
এমনকি বিএলএফে লেখা নেয়ার ক্ষেত্রেও আমরা এক হাজার শব্দের বেশি লেখা প্রকাশ করতে চাই না, কারণ পাঠক বড় লেখা পছন্দ করেন না।
ফেসবুকের এই অ্যালগরিদমের সাথে তাল না মেলাতে পারলে পাঠক টানা যায় না বলে নিজেদের কন্টেন্ট তৈরির সময় চাপে থাকেন সাংবাদিকরা। ফেসবুকের অ্যালগরিদম অনুযায়ী লম্বা ভিডিও বেশি মনোযোগ টানতে পারে না। তাই বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমই এখন এক মিনিটের ভিডিও তৈরি করে।
একটা হেডলাইন দিতে গেলেও এই প্ল্যাটফর্মগুলোর অ্যালগরিদমের কথা চিন্তা করতে হয়। সহজ ভাষায় বলা যায়, সরাসরি না হলেও এসব অ্যালগরিদমও এখন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিপন্থী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১৮ সালে ফেসবুক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মানুষের টাইমলাইনে এখন থেকে তাদের লাইক দেয়া পেইজের পোস্টগুলোর তুলনায় তাদের কাছের বন্ধুদের পোস্ট বেশি দেখা যাবে। এমন সিদ্ধান্ত মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য সবকিছু আরো কঠিন করে দিয়েছে। এখন ফেসবুকের অ্যালগরিদম আরো প্রভাব ফেলে সংবাদমাধ্যমের খবর পরিবেশনে, সাংবাদিকদের স্বাধীনতায়।
সোশাল মিডিয়ার সমস্যাটা এখানেই। ফেসবুক বা টুইটার যাই হোক না কেন, কোনোটিই আসলে সংবাদমাধ্যমের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয় নি। এগুলো তৈরি করার কারণ মানুষের জন্যে অনলাইনে একটা সামাজিক স্পেইস তৈরি করা। এখানে একজন অশিক্ষিত ড্রাইভারের কথা বলার জায়গা যতটুকু, একজন পিইচডি করা গবেষকেরও ঠিক ততটুকুই। আমার আপনার কথা বলার জায়গা যতটুকু, একজন প্রথিতযশা সাংবাদিকেরও ঠিক ততটুকুই। নিউইয়র্ক টাইমস-এর কথা বলার জায়গা যতটুকু, ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি সান-এর ও ততটুকুই।
আরো সহজ করে বোঝানো যাক। সংবাদ বিষয়টা তো আলাদা কিছু নয়। এর মানে খবর। সেই খবর আমিও দিতে পারি, একটি সংবাদমাধ্যমের থেকেই আসতে হবে এমন কোন কথা নেই। কিন্তু যেখানে সংবাদমাধ্যমের খবর আর সাধারণ মানুষের খবরের মাঝে পার্থক্য তৈরি হয়, সেটি হচ্ছে যেকোন মূলধারার সংবাদমাধ্যমে প্রতিটি খবর প্রচারের আগে একটি সম্পাদকীয় বা এডিটোরিয়াল বোর্ডের সামনে দিয়ে যায়।
সেই এডিটোরিয়াল বোর্ড নিজেদের এথিকস্ এবং সম্পাদকীয় নিয়মকানুন অনুযায়ী প্রতিটি খবরকে বিচার করেন। সেটিকে যাচাই বাচাই করার পরই তা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেন। তার মানে একটি খবর একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার আগে সেটার সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করা হয়, তাতে একচোখা পক্ষপাতিত্ব যাতে না থাকে সেটি নিশ্চিত করা হয়। ঠিক এই এডিটোরিয়াল পলিসিগুলোর কারণেই সংবাদের সংবাদমাধ্যমের উপর নির্ভরশীল হওয়া প্রয়োজন। এই সম্পাদকীয় নিয়মকানুন-ই ফেইক নিউজ রোধ করে, প্রতিটি খবরের বিশ্লেষণকে করে গঠনমূলক।
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর কিছুই নেই। যখন এই প্ল্যাটফর্মগুলোয় সাধারণ মানুষ এবং মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর কথা বলার জায়গাটা একই থাকে, যখন পাঠক টানতে প্রতিটি সংবাদমাধ্যমও এই প্ল্যাটফর্মগুলোর উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়, তখন সংবাদ আর সংবাদমাধ্যমের উপর নির্ভরশীল থাকে না। সাধারণ মানুষের সংবাদ এবং গণমাধ্যমের সংবাদের দাম তখন একই হয়ে যায়, কারণ সাধারণ মানুষ সম্পাদকীয় নিয়ম-নীতির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারেন না। মানুষ যখন সাধারণ মানুষের প্রোফাইল থেকে পাওয়া খবরও বিশ্বাস করতে শুরু করে, তখন চারপাশে ফেইক নিউজের জোয়াড় বইতে বাধ্য।
ফেইক নিউজ এবং মন্তব্যধর্মী সাংবাদিকতার প্রসার
সোশ্যাল মিডিয়া সাংবাদিকতার ধারণায় আরেকটা বড় বদল এনেছে। সাংবাদিকরাও যে রক্ত মাংসের মানুষ, সেটা সাধারণ জনগণের সামনে এসেছে। আগে সংবাদিকরা ছিল শুধু-ই ক্যামেরা বা কলমের পেছনের সৈনিক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে তাদের ব্যক্তিগত জীবনও এখন মানুষের সামনে চলে এসেছে। এবং সাংবাদিকরাও যেহেতু মানুষ, নিজস্ব জীবনে তাদেরও নানা ভুল ত্রুটি আছে, আছে ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্ব।
সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে সাংবাদিকদের এই ব্যক্তিগত জীবন এখন তাদের পেশাগত জীবনের সাথে মিলেমিশে একাকার। পেশাগত জীবনের সাংবাদিকদের মূল কাজ গঠনমূলক সমালোচনা করা। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে প্রায় প্রতিটি মানুষের নিজস্ব মতামত সবসময় গঠনমূলক হয় না। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত জীবনের নিজস্ব মত এখন তাদের পেশাগত জীবনের গঠনমূলক সমালোচনার সাথে মিলে যাওয়াতে সারা পৃথিবীতেই মন্তব্যধর্মী সাংবাদিকতার একটা বিশাল ঝড় উঠছে।
উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক। বাংলাদেশের জনপ্রিয় সাংবাদিক মুন্নী সাহা এখন টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজ-এ কাজ করেন। মুন্নী সাহার ব্যক্তিগত মতামতের সাথে কিন্তু একটি সংবাদমাধ্যম হিসেবে এটিএন নিউজ-এর মতামতের মিল না-ই থাকতে পারে। ব্যক্তিগত জীবনে মিস মুন্নী কিছু বলার আগে তার উপর গঠনমূলক হওয়ার কোন দায়িত্ব থাকে না, কিন্তু পেশাগত জীবনে একটি প্রশ্ন করার আগেও সাংবাদিক হিসেবে গঠনমূলক হওয়া তার দায়িত্ব। তিনি তার ব্যক্তিগত মতামত তার ফেসবুক কিংবা টুইটার অ্যাকাউন্টে দিতেই পারেন, কিন্তু সেই মতামত সবসময়-ই এটিএন নিউজকে প্রতিনিধিত্ব করবে, এমন কোন কথা নেই।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একই জিনিস অন্য যেকোন সাংবাদিককে নিয়ে বলা যেতে পারে। ব্রিটিশ সাংবাদিক মেহদি হাসানের ব্যক্তিগত মতামতের সাথে আল জাজিরা-র দৃষ্টিভঙ্গির মিল না-ই থাকতে পারে। সিএনএন-এ চাকরি করেন বলেই অ্যান্ড্রু ক্যুমোর সব মতামত সিএনএন-এর প্রতিনিধিত্ব করবে, তা নাও হতে পারে।
সমস্যা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ এই ব্যক্তিগত আর পেশাগত জীবনের তফাতটা বুঝে উঠতে পারে নি এখনো। তাদের কাছে মেহদি হাসান মানেই আল জাজিরা, অ্যান্ড্রু ক্যুমো মানেই সিএনএন। ফলে এই মানুষগুলো যখন তাদের নিজস্ব প্রোফাইলে নিজেদের ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেন, তখন সাধারণ পাঠক ধরেই নেন যে এই মতামতগুলো তাদের সংবাদমাধ্যমের মতামতও। সেই ব্যক্তিগত মতামত সবসময় গঠনমূলক হয় না, তা হওয়ার কোন কারণও নেই। কিন্তু পাঠকের কাছে এই ব্যক্তিগত মতও সাংবাদিকতা-ই মনে হয়, কারণ এই পেশায় এই মানুষগুলো সাংবাদিক।
তাই সাংবাদিকতা গঠনমূলক-ই হতে হবে, এই ধারণা থেকে সাধারণ পাঠক সরে গেছে অনেকদূর। এতে একপাক্ষিক কারো দোষ নেই, কিন্তু পরিবেশটাই এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে মানুষের মনে বদলে যাচ্ছে সাংবাদিকতার সংজ্ঞা। এই কারণেই নিউইয়র্ক টাইমস তাদের সাংবাদিকদের উপর সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু লেখার আগে বিশাল নীতিমালা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের মতে একজন সাংবাদিক যা-ই বলুক না কেন, ঘুরে ফিরে সেটা তার সংবাদমাধ্যমকেই প্রতিনিধিত্ব করে।
এর একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবও আছে। সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা যেটায় কাজ করতে সাংবাদিকতা নিয়েই পড়াশোনা করতে হয় না। পৃথিবীর বেশিরভাগ সাংবাদিক-ই অন্য কোন বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করার পরেও পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা বেছে নিয়েছেন। এতে তাদের কোন সমস্যাও হয় নি কারণ সাংবাদিকতা মূলত হাতে কলমে শেখার বিষয়। তাই নতুন দিনের যেই ছেলেটা আজকে সাংবাদিক হতে চায়, সে কিন্তু জানছে না যে সাংবাদিকতার অন্যতম দেয়ালের নাম গঠনমূলক সমালোচনা। সে সাংবাদিকতা হিসেবে যা চিনছে, সেটি মূলত মানুষের ব্যক্তিগত মন্তব্য। এই ছেলেটি ভবিষ্যতে যদি মন্তব্যধর্মী সাংবাদিকতা করে, তার দোষটা কোথায়?
ফেইক নিউজের ব্যাপারটাও প্রায় একই। প্রোপাগান্ডা বলুন কিংবা মিথ্যা সংবাদ, কোনটিই তো আসলে নতুন নয়। গত শতকে ফেইক নিউজ বিষয়টি ঘুরে ফিরে এসেছে অনেকবার। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এখন তার মাত্রা এতটাই ভয়ংকর হয়ে দাঁড়িয়েছে যে এখন তা ভাবাচ্ছে সবাইকে।
সংবাদ এখন কাদের নিয়ন্ত্রণে?
ফেইক নিউজ কিংবা সাংবাদিকতার গড় মানের অবনতি না হয় সবার-ই চোখে পড়েছে। কিন্তু মূলধারার গণমাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয়টি নিয়ে এখনো ঠিকমতো আলোচনা সমালোচনা শুরু হয় নি। নিজেদের অজান্তেই আমরা সংবাদের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিচ্ছি ফেসবুক কিংবা টুইটারের মতো থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠানের হাতে। পৃথিবীর বেশিরভাগ সংবাদ যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্যে দিয়ে সবার কাছে পৌছানোর পথ পায়, তখন বিশ্বের প্রতিটি সংবাদকে নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পায় ফেসবুক, টুইটার কিংবা ইউটাবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো। তারা চাইলে যেকোন খবরকে ছড়িয়ে দিতে পারে দাবানলের মতো, আবার চাইলে যেকোন খবরকে ধামাচাপা দিতে পারে যেকোন সময়।
সোজা কথায়, ফেসবুক কিংবা অন্য যেকোন থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠানের হাতে পৃথিবীর বেশিরভাগ সংবাদের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন জবাবদিহিতা নেই। ফেসবুক বলুন কিংবা টুইটার, প্রতিটি-ই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের নিয়মনীতি এবং পলিসি নিজেদের মতো করে তৈরি করে। তাই ফেসবুকের সাথে টুইটারের কর্মপন্থায় পার্থক্য আছে, আছে অ্যালগরিদমে তফাৎ। কিন্তু প্রাইভেট কোম্পানি হওয়ার জন্যে কোন কর্মপন্থা কিংবা নীতি নিয়েই তাদের জবাব দিতে হয় না। ফেসবুকের মতো বিশাল কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কোনো পথ আমাদের সামনে নেই।
গত কয়েক বছরের ইতিহাস যা বলছে, তাতে সংবাদের নিয়ন্ত্রণ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর হাতে তুলে দেয়াটা একটা বিশাল ভুল বলে-ই মনে হয়। সবগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্যে প্রায় ২ বিলিয়ন ব্যবহারকারী নিয়ে যেটা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী, সেই ফেসবুকের নীতি নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠছে অনবরত। গত এক দশক ধরেই ফেসবুকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তাদের প্ল্যাটফর্মে যেসব কন্টেন্ট পোস্ট করা হয়, সেগুলোর ব্যাপারে তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
শুধু ফেসবুক নয়। ২০১৮ সালে প্রায় সবগুলো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এমন কিছু না কিছু হয়েছে, যেটা মানুষকে এসব প্ল্যাটফর্মের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে বাধ্য করেছে। সেটা হোয়াটসঅ্যাপের গ্রুপে ফেইক নিউজের ছড়াছড়ি হোক, কিংবা ইনস্টাগ্রামে হয়রানির অভিযোগ – সবকিছুই প্রশ্ন তুলতে বাধ্য করেছে, এত কিছুর পরেও কীভাবে আমরা সামাজিক যোগাযোগের এই প্ল্যাটফর্মগুলোর হাতে বিশ্বব্যাপী খবরের বিশাল নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে পারি?
এবং বছর দুয়েক আগে যারা এমন সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, তারা যে খুব একটা ভুল ছিলেন না সেটা এখন বোঝা যাচ্ছে। ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা এবং ফেইক নিউজের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ফেসবুকের নেতিবাচক ভূমিকা তো এখন প্রমাণিত-ই। এছাড়াও কয়দিন আগে ফেসবুক ‘ফেসবুক নিউজ’ নামে সংবাদের জন্য একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছে, যেই প্ল্যাটফর্ম তৈরি হওয়ার আগেই তাদের নীতি এবং কর্মপন্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠা শুরু করেছে।
ফেসবুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তারা নিজেদের প্ল্যাটফর্মে ডানপন্থী রাজনীতি এবং ডানপন্থী সংবাদমাধ্যমের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। ফেসবুক নিউজের প্রধান ক্যাম্পবেল ব্রাউনের বিরুদ্ধে কট্টর ডানপন্থী হওয়ার অভিযোগ অনেকদিনের। এছাড়াও, ফেসবুক নিউজের সাথে যে সকল সাংবাদিক জড়িত, তারা প্রায় প্রত্যেকেই কখনও না কখনও ক্যামেরার সামনে এমন কোন মন্তব্য করেছেন যেগুলোকে হেইট স্পিচ বললেও ভুল কিছু হবে না।
ফেসবুকের নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠার আরো কারণ আছে। করোনা বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ট্যাটাসে ফ্যাক্ট চেক না করা, দ্য ডেইলি কলার নামের বির্তকিত সংবাদমাধ্যমকে ফেসবুকে ফ্যাক্ট চেকের দায়িত্ব দেয়া, ডানপন্থী বির্তকিত সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ-এর সাথে মি. জাকারবার্গের সখ্যতা – প্রায় সবকিছুই নির্দেশ করে, ফেসবুক পক্ষপাতদুষ্ট।
সংবাদের নিয়ন্ত্রণ কোন একটি কর্তৃপক্ষের কাছে চলে যাওয়ার সমস্যাটা এখানেই। এই ফেসবুক কিংবা টুইটারের মতো থার্ড পার্টি কোম্পানি আমাদের তথ্য এবং এই খবরের নিয়ন্ত্রণকে নিজেদের লাভের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে না, এমন কোন গ্যারেন্টি আমাদের কাছে নেই। এবং ইতিহাস বলছে, তারা করেও।
সংবাদের নিয়ন্ত্রণ কারো হাতে চলে যাওয়া কতটা ভয়ংকর, তা আসলে বোঝার উপায় নেই। শুধু খবরের মাধ্যমেই ধ্বংস করে দেয়া যেতে পারে একটা রাষ্ট্রকে। শুধু খবর নিয়ন্ত্রণ করেই যে একটি নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করা যায়, সেটা দেখা গেছে ২০১৬ সালেই।
সমাধান কী?
এত সমস্যার কোনটির-ই এখন পর্যন্ত কোন টেকসই সমাধান পাওয়া যায় নি। আদৌ পাওয়া যাবে কি না, সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ফেইক নিউজ সামলাতে যেই পদ্ধতি অবলম্বন করছে, তা ভয়াবহ। বিভিন্ন আইন বানিয়ে ফেইক নিউজ সামলানোর যেই প্রচেষ্টা, তা বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকতার স্বাধীনতাকেই ফেলছে হুমকির মুখে। বিভিন্ন দেশের এই আইনগুলোর মাঝে অনেক গলদ আছে, যা সহজেই স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফেইক নিউজের বিস্তার থামানোর জন্যে আসলে আইন কোন সমাধান নয়। দুটি কারণে। প্রথমত, যেই হারে ফেইক নিউজের বিস্তার ঘটছে, তা প্রকৃতপক্ষে কোন আইন করে থামানো যাবে না। এটি কোন দেশের একার সমস্যা নয়। বৈশ্বিক সমস্যা, এবং তাই এটা ঠেকাতে বৈশ্বিক প্রচেষ্টাই প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, ফেইক নিউজ ছড়ানোর পিছনের মূল কারণ এখন আর স্বার্থান্বেষী মানুষের প্রোপাগান্ডা নয়। হ্যাঁ, ফেইক নিউজকে অনেকেই স্বার্থসিদ্ধির কাজে ব্যবহার করেন ঠিকই, কিন্তু সেগুলো এত বিশাল হারে ছড়িয়ে পড়ার কারণটা মানুষের অজ্ঞতা।
যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ অকপটে স্বীকার করেছেন, তারা নিয়মিত ভুল খবর শেয়ার করেন। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, এই পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই এখনো কোনটি সত্য খবর আর কোনটি মিথ্যা, সেটি বের করতে জানেন না। আমরা আমাদের টাইমলাইনে যা-ই আসুক না কেন, অন্ধের মতো তা-ই শেয়ার করে ছড়িয়ে দিতে থাকি আরো কোটি কোটি মানুষের মাঝে। কখনো কখনো সত্য মিথ্যার পার্থক্যটা খুব সূক্ষ্ম হয়, কিন্তু বেশিরভাগ সময়-ই একবার গুগলে সার্চ দিলেই বেরিয়ে আসে সত্য খবরটা।
ফেইক নিউজ থামানোর মূল সমাধানটা ঠিক এখানেই। শিক্ষা। কোনো কিছু বিশ্বাস করার আগে আমাদেরকে আরো ভালোমতো ভাবতে হবে। কোনো কিছু সঠিক — সেটা অন্ধের মতো বিশ্বাস না করে আমাদের আরো ভালোমতো পড়াশোনা করে নিতে হবে। এই সত্য মিথ্যার গলদ বের করার বিষয়টি মানুষকে শেখাতে হবে তাদের জীবনের শুরু থেকেই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অংশ হিসেবে তুলে ধরতে হবে যুক্তিবাদী চিন্তার গুরুত্ব। যেকোন তথ্য বিশ্বাস করার আগে প্রশ্ন তুলতে হবে – এই তথ্য কারা প্রকাশ করেছে, কেন প্রকাশ করেছে। প্রতিটি তথ্য নিয়ে পড়াশোনা করেই তবে বিশ্বাস করে যাবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলোরও এখানে বিশাল দায়িত্ব আছে। তাদের সাবধান হতে হবে। ফ্যাক্ট চেক করতে হবে, মিথ্যা খবরের ব্যাপারে মানুষকে জানাতে হবে। বিজ্ঞাপনের নিয়মনীতি ঠিক করতে হবে খুব সাবধানে, যাতে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভুল খবর ছড়িয়ে না পরে। সংবাদমাধ্যমকেও বানাতে হবে নিজেদের প্ল্যাটফর্ম, কমাতে হবে সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিকতা।
কিন্তু সেই দিন আসতে এখনো বহুদিন বাকি। কোন দেশ-ই আসলে ফেইক নিউজকে সামলাতে সমাধানটাকে শিক্ষার মাঝে দেখছে না। আইন করছে, এবং সেই আইন নিজেদের বিরুদ্ধে সমালোচনা ঠেকাতে ব্যবহার করছে। ফেসবুকের নীতির বিরুদ্ধে উঠছে গুরুতর অভিযোগ। সংবাদমাধ্যমগুলোও পাঠক টানতে এতটাই ব্যস্ত যে তারাও সরে আসতে পারছে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে। আসলে এখনো এসব সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ-ই শুরু হয় নি। ঠিকমতো সমাধান বের করতে সচেতন হতে হবে বিশেষজ্ঞদের, আলোচনার মাধ্যমে তুলে আনতে হবে কিছু টেকসই সমাধান।
কিন্তু তার আগেই যে সাংবাদিকতা এবং সংবাদমাধ্যমের পাকাপাকি ক্ষতি হয়ে যাবে না, সেই নিশ্চয়তা কেউ কি দিতে পারবে?
লেখক টিডিএ এডিটোরিয়াল টিমের সদস্য।