মগের মুল্লুকে করোনাকাল

Editor
22 Min Read

রাহিন আমিন


“২৯শে ফেব্রুয়ারি রাত দুইটায় আমি দেশে ফিরেছি। এখানে আসার পর একটা ফর্ম দিয়েছে। সেটা পূরণ করে জমা দেয়ার পর আমাকে আর কিছুই বলে নি। শুধু ইমিগ্রেশন যখন পার হই, আমার পাসপোর্ট দেখে বলল, ‘আপনার কি পরীক্ষা হয়েছে?’ আমি বললাম, ‘না।’ তখন ইমিগ্রেশনে বলল, ‘পরীক্ষাটা হলে ভালো হতো।’ এই বলল। আর কিছুই না। তারপর পাসপোর্টে সিল মেরে দিল। আমি এসে পড়লাম।”

১২ই মার্চ বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ দেশের এয়ারপোর্টে স্ক্রিনিং এবং পরীক্ষা ব্যবস্থার এমন চিত্রই তুলে ধরেছেন এক সদ্য দেশে ফেরা প্রবাসী। বিমানবন্দরে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই ছেড়ে তো দেয়া হয়েছে-ই, ১২ দিন ধরে দেশে থাকার পরেও সরকারি কোনো বিভাগ থেকে তার সাথে যোগাযোগ করা হয় নি। কোথাও যেতেও কোনো বাধা তিনি পান নি। জনসমাগম এড়িয়ে চলছেন কিনা সে প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বাড়ি আসার পর আত্মীয় স্বজনের কাছে না গিয়ে তো থাকা যায় না।

চীনে করোনার গ্রাফ জানুয়ারির শেষের দিকে এসে যখন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করেছে, তখনও এদেশের আমলাগণ “টুগেদার উই আর স্ট্রংগার দ্যান করোনা” গান গাইতে ব্যস্ত।

সে সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দেশীয় সংবাদমাধ্যমগুলোয় করোনা ব্যবস্থাপনার যে চিত্র ধরা পড়ে, তাতে মূলত তিনটা বিষয় চোখে পড়ে:

প্রথমত, সময় থাকতে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে না পারা এবং দেরিতে ব্যবস্থা গ্রহণ।

দ্বিতীয়ত, প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ব্যবস্থা এবং সমন্বয়হীনতার অভাব।

এবং সর্বশেষ, যতটুকু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তার মাঝেও অব্যবস্থাপনা এবং ব্যর্থতার চিত্র।

শুধু এই তিন বাক্যে আসলে আমরা করোনা ব্যবস্থাপনায় কতটুকু ব্যর্থ হয়েছি, তা বোঝানো সম্ভব নয়। করোনা সামলাতে ১৮ কোটি জনতা এবং একটি ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থার দেশে আমাদের যতটুকু করার প্রয়োজন ছিল, আমরা তার এক চতুর্থাংশও করতে পেরেছি কি না, সে বিষয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। তার সাথে এ দেশের মন্ত্রীগণ এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা মানুষদের “আমরা ইতালি-আমেরিকার থেকেও ভালো ব্যবস্থাপনা করেছি” ধরণের অতিশয়োক্তি ব্যাপারটাকে হতাশা ছাড়িয়ে কৌতুকে পরিণত করে তোলে।

 

শনাক্তকরণে প্রস্তুতির নমুনা

প্রথম থেকে শুরু করা যাক। বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী চিহ্নিত করা হয় মার্চের ৮ তারিখে। করোনাকে ‘গ্লোবাল ইমারজেন্সি’ বলে ঘোষণা দেয়া হয় জানুয়ারির ৩০ তারিখে। যেকোনো সচেতন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তার আগেই করোনা নিয়ে সচেতন হয়ে যাওয়াটাই যৌক্তিক। সেটা বাদ দিলেও, বিশ্ব প্যানডেমিকের পর্যায়ে যাওয়ার পর থেকে এদেশে প্রথম রোগী শনাক্তকরণের আগ পর্যন্ত ব্যবস্থা নেয়ার সময় ছিল ৩৮ দিন।

এই ৩৮ দিনে এ দেশের করোনা ম্যানেজমেন্ট বডি এবং আইইডিসিআর কী করেছে, সে বিষয়ে আমরা কেউই স্পষ্টভাবে অবগত নই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি অনুযায়ী, এ সময়ে মূল প্রস্তুতির অংশ হিসেবে হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করা হয়েছে। এয়ারপোর্টে আসা যাত্রীদের পরীক্ষা করাও এ সময়ে মূল প্রাধান্য পেয়েছে। ২১শে জানুয়ারি থেকে চীন থেকে আসা যাত্রীদের শনাক্তকরণ শুরু হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সব দেশ থেকে আসা যাত্রীদেরই থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে, সে দাবি করে আইইসিডিআর।

কিন্তু অভিযোগ আছে একদম শুরু থেকেই। বলা যেতে পারে, বাংলাদেশে করোনা ব্যবস্থাপনায় প্রথম ব্যর্থতার শুরুই হয় যাত্রীদের ঠিকমতো শনাক্তকরণ না করতে পারায়। গবেষণা অনুযায়ী বলা হয়ে থাকে, স্ক্রিনিংয়ে শতভাগ মনিটরিং করতে পারলেও মাত্র ৪৬% কেইস শনাক্ত করা যায়। বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বিবিসিকে বলেন, “একশত জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি এয়ারপোর্ট দিয়ে আসলে এর মাঝে মাত্র ৪৬ জনকে আপনি আইডেন্টিফাই করতে পারবেন। সুতরাং এখানে একটা বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন থেকে যাচ্ছে আগে থেকেই।”

জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি দু’মাস ঘাটলেই দেখা যায়, এই সময়ে বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন এমন মানুষের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ। সরকারি হিসেবেই ২১ জানুয়ারি থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত সময়ে এ সময়ে স্ক্রিনিং করা হয়েছে আড়াই লাখ মানুষের। বাকি তিন লাখ মানুষ শুরুতেই নজরদারির বাইরে। যেই আড়াই লাখ মানুষকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে, ৪৬ শতাংশের হিসেবে তাদের মাঝে ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষের সঠিকভাবে আইডেন্টিফাই করা হয়েছে। তার মানে, শতাংশের হিসেবে যেই সাড়ে ৫ লাখ মানুষ মার্চের ৬ তারিখ পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন, তাদের মাঝে সঠিকভাবে শনাক্তকরণ হয়েছে মাত্র ২০% মানুষের। ১২ মার্চের রিপোর্ট অনুযায়ী, এদের মাঝে সারা দেশে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন মাত্র ২০০ জন মানুষ!

এটা সরকারি হিসেব। সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনগুলোয় যেই অভিযোগ উঠে আসে, তাতে এই ২০ শতাংশেরও ২০% সঠিকভাবে শনাক্তকরণের মধ্যে দিয়ে গেছেন কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ জাগতে বাধ্য। বিবিসির একই প্রতিবেদনে আরেক প্রবাসীর কথা বলা হয়, যিনি ইতালি থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। তার বর্ণনানুযায়ী বিমানবন্দরে পরীক্ষা করার মতো অবস্থাই ছিল না। “কয়েকটা ফ্লাইটে এক হাজারের মতো যাত্রী ছিল। সেখানে এত যাত্রীকে পরীক্ষা করার পর্যাপ্ত জায়গাই ছিল না। শুধু সতর্কতামূলক একটা লিফলেট হাতে ধরিয়ে দেয়। এইটুকুই।”

পাঠকদের অবগতির জন্য আরেকবার জানিয়ে দেয়া যেতে পারে, সরকারি হিসেবে যেই আড়াই লাখের পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে, ইনারা কিন্তু তাদের মধ্যেই পড়েন!

আওয়ামী লীগ নেতা বদরুদ্দিন আহমদ কামরান লন্ডন থেকে ১৪ মার্চ দেশে ফিরেই ১৭ মার্চে মুজিববর্ষের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ার পর জানা যায়, বিমানবন্দরে পরীক্ষাই করা হয় নি তাকে। বিডিনিউজ২৪.কম-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “বিদেশ থেকে ফেরার সময় এয়ারপোর্ট বা সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে কেউ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে এমন কথা বলে নি। আমি জানতাম না বিষয়টা। শুধু আমি কেন, আমার সঙ্গে যারা এসেছে কাউকেই তো ওই দিন কেউ বলে নি যে, ‘আপনাদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে’।”

এর অনেক আগেই তা নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়েছে। ৬ই ফেব্রুয়ারি এক সংসদ সদস্য সংসদে চীনফেরত এক নারীযাত্রীর ফেইসবুক লাইভ নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ উদ্ধৃত করে বিমানবন্দরে পরীক্ষায় গাফিলতি নিয়ে তদন্তের দাবি জানান। কিন্তু তাতেও খুব বেশি লাভ হয় নি, তার প্রমাণ তো আমাদের রাজনৈতিক নেতারাই দিয়েছেন।

 

চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রস্তুতির নমুনা: পিপিইমাস্ক বং ভেন্টিলেটর

প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রস্ততি:

প্রথম রোগী শনাক্তকরণের আগের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দাবি করা হয়েছিল, সারা বাংলাদেশে ১০ হাজার করোনা আইসোলেশন বেডের ব্যবস্থা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। করোনা ছড়িয়ে পড়ার পরে সেই ১০ হাজার শয্যা কতটুকু কাজে লেগেছে, সে বিষয়ে একটু পরে আসা যাক। কিন্তু শুধু শয্যার ব্যবস্থা করলেই যে হবে না, সে বিষয়টিই বোধহয় আমাদের চোখ এড়িয়ে গেছে।

বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরি সরকারের প্রস্তুতের ব্যাপারে মত দিতে গিয়ে বলেছেন, “শুধু হাসপাতালে শয্যা রাখলেই হবে না। জেলা উপজেলায় এর চিকিৎসা কতটা আছে, তা নিয়ে তার সন্দেহ আছে। করোনার চিকিৎসা বড় বড় হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও করা সম্ভব না।

করোনাভাইরাসে যদি কেউ আক্রান্ত হয়েই যায়, তখন মূল প্রভাবটা পড়বে ফুসফুসে। আর ফুসফুসে হলেই শ্বাসকষ্ট হবে, অক্সিজেন নিতে পারবে না। সেখানে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা নিরূপণের যন্ত্র থাকতে হবে। ভেন্টিলেটর এবং মনিটর থাকতে হবে। সার্বক্ষণিক নার্স-ডাক্তার থাকতে হবে। এমন ব্যবস্থা আমাদের কয়টা হাসপাতালে আছে?”

 

মাস্ক এবং পিপিইর সংকট:

ফ্রন্টলাইনে থাকা ডাক্তারদের নিজস্ব সুরক্ষার জন্য যেই মাস্ক এবং পিপিই করোনার কারণে খাদ্যের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই পিপিই-র সংকট এদেশকে ভোগাচ্ছে এখনো। ২৬ মার্চ প্রথম আলোয় শিশির মোড়লের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পিপিই নিয়ে এখনো কতটা সমস্যায় আছে বাংলাদেশ। ২৬ মার্চ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে পিপিই আছে ৩ লাখ ৫৭ হাজার। যেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ইকবাল কবিরের মত অনুযায়ী, আগামী তিন মাসে আমাদের কমপক্ষে ১০ লাখ পিপিই দরকার হবে। আর প্রতি মাসে মাস্ক দরকার হবে কমপক্ষে ১০ লাখ, তিন মাসের হিসেবে ৩০ লাখ।

প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ তো এমনিতেই অর্ধেকেরও কম, তার মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোনা যাচ্ছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। প্রশাসনের লোকজনের পিপিই পরা ছবি ভাইরাল হয়েছে কয়েকবার। শুরুতে পিপিই নিয়ে এতটাই অনিয়ম শুরু হয়েছিল পরে কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করতে বাধ্য হয়েছে। তাতেও যে খুব একটা লাভ হয়েছে, সে বিষয়ে তেমন কোনো প্রমাণ এখনো দৃশ্যমান নয়।

 

ভেন্টিলেটর:

করোনাকালে যেই ভেন্টিলেটর সবচেয়ে গুরুত্বপূণ চিকিৎসা যন্ত্রগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে, এদেশে সেটার সংখ্যাও কত কম, তা শুনলে হতবাক হয়ে যেতে হয়। ‘দ্য বিজনেস স্যান্ডার্ড’-এর ৩০ মার্চের এক প্রতিবেদন বলছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্‌ ডিরেক্টরেট অনুযায়ী, সংখ্যাটা মাত্র ৪৫। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী, এই সংখ্যাটা ৫০০। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দাবি ধরে হিসেব করলেও এদেশে প্রতি ৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষের জন্য মাত্র একটি করে ভেন্টিলেটর আছে।

জাতিসংঘের এক ফাঁস হওয়া মেমোতে প্রকাশিত হয়, রাতারাতি ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশে ২০ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে। তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া যাক এই সংখ্যাটা মৃত্যুর নয়, বরং রোগাক্রান্তের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, পৃথিবীর সর্বমোট করোনা রোগীর ১০-২০ শতাংশ মানুষের ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হতে পারে। এদেশে যদি ২০ লাখ মানুষও আক্রান্ত হয়, তবে ১০%-এর হিসেবে ভেন্টিলেটর লাগবে দুই লাখ লোকের। সে জায়গায় ভেন্টিলেটর আছেই মাত্র ৫০০, এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, করোনার জন্য ব্যবহার করা হবে এর মাত্র ১২০টি।

বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সাথে তুলনা করা যাক। যুক্তরাষ্ট্রে ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ১,৬০,০০০। জরুরি অবস্থায় ব্যবহারের জন্য আছে আরো ১২ হাজার। মানে প্রতি ২০ হাজার মানুষের জন্য আছে একটি ভেন্টিলেটর। ইতালিতে ভেন্টিলেটরের সংখ্যা তিন হাজার। এখানেও জনসংখ্যা অনুযায়ী প্রতি ২০ হাজার মানুষের জন্য একটি করে ভেন্টিলেটর আছে। পাশের দেশ ভারতে ভেন্টিলেটরের সংখ্যা প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার। অর্থাৎ প্রতি ৩০ হাজার মানুষের জন্য আছে একটি করে ভেন্টিলেটর। ভেন্টিলেটরের দিক থেকে আমাদের থেকে এগিয়ে আছে পাকিস্তানও। ১৯ কোটির দেশে প্রতি ৮৬ হাজার মানুষের জন্য বরাদ্দ একটি ভেন্টিলেটর।

 

লকডাইনে ব্যর্থতা

ভাঙা ঢাল-তলোয়ার নিয়ে লড়াই করতে নেমে যে জিনিসটা আমাদের সবচেয়ে প্রয়োজন ছিল, সেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেও আমরা পুরোপুরি ব্যর্থ। যে সময় থেকে সব ধরণের জনসমাগম বন্ধ করতে উদ্যোগ নেয়ার দরকার ছিল, উদ্যোগগুলো এসেছে তার অনেক পরে। ১৩ মার্চ পর্যন্ত আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলে গেছেন, কঠোর এবং জরুরি ব্যবস্থাপনার এখনো কোনো দরকার নেই। আতঙ্ক না ছড়িয়ে তারা বরং স্বাস্থ্য নির্দেশনার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করাটাই এই মুহুর্তে বেশি প্রয়োজনীয় মনে করছেন।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে জনসমাগম এড়িয়ে চলাসহ যেসব স্বাস্থ্য নির্দেশনা এসেছে, তাদেরকে এক কথায় গা বাঁচানোর প্রক্রিয়াই বলা যেতে পারে। কারণ, জনসমাগম এড়িয়ে চলার নির্দেশনা তো এলো, কিন্তু দৈনন্দিন কাজের জরুরি দরকারে যেসব জায়গায় প্রতিনিয়ত জনসমাগম হয়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সেই জরুরি কাজগুলো মানুষ কীভাবে করবে, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। যেমন গণপরিবহন। যারা গণপরিবহনে যাতায়াত করেন, তারা জানেন, এখানে মানুষের ভিড়ে কোনো নির্দেশনা মানার সুযোগ নেই। ঢাকার রাস্তায় প্রতিটি বাসেই আসনের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ উঠানো হয়, এবং জীবিকার প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ সেখানে উঠতে বাধ্যও হন। ৪০ আসনের বাসে যখন ৮০ জনকে উঠানো হয়, সেখানে কিভাবে মানুষ একে অন্যের থেকে তিন ফুট দূরত্ব রেখে চলবে, নির্দেশনা দেয়ার আগে এ বিষয়গুলো সরকার ভেবে দেখার প্রয়োজন মনে করেনি বলে ভাবাটাই সমীচিন।

মার্চের অর্ধেক পর্যন্ত খোলা ছিল সাধারণ জনসমাগমের সব জায়গা। অফিস-আদালত তো আছেই, বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট ম্যাচে দর্শকভর্তি স্টেডিয়ামে চলেছে ম্যাচ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে যা হলো, তাকে তো সস্তা বাংলা নাটক ছাড়া অন্য কিছু মনে হয় না। ১৫ তারিখ পর্যন্ত সরকার বলে এসেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় এখনো আসে নি। ততদিনে প্রায় প্রতিটি স্কুল কলেজেরই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার নেমে এসেছে অর্ধেকে। যেন অভিভাবকরাই সরকারের চেয়ে বেশি সচেতন। ১৫ মার্চে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন, স্কুল কলেজ খোলা রাখার না রাখার সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। সেদিনই একই প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে জানালেন, তারা মনে করছেন এখনো বাংলাদেশে স্কুল কলেজ বন্ধ করে দেয়ার কোনো বিজ্ঞানসম্মত কারণ নেই। ঠিক তার পরের দিনই পুরো ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে ১৭ তারিখ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হলো। মুজিববর্ষের আতশবাজি দেখতে মানিক মিয়া এভিনিউতে এর মাঝেই ভিড় জমিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ, মার্চের ২২ তারিখে হয়েছে উপ নির্বাচন। কোথাও যেন কোনো সমন্বিত ব্যবস্থাপনার রেশমাত্র নেই।

বাংলাদেশে করোনা ব্যবস্থাপনায় ঘরের শত্রু বিভীষণ এটাকেই বলা যেতে পারে। সমন্বিত সিদ্ধান্তের অভাব। করোনা মোকাবেলায় আপাত সফল হয়েছে এমন দেশগুলো কিভাবে কী করেছে, সে বিষয়ে একটু পড়াশোনা করতেই যে শব্দটি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে, অনেক খুঁজেও তার কোনো ভালো বাংলা পাওয়া গেলো না। ‘ডিসাইসিভ’। শুরু থেকেই শক্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণেই করোনা মোকাবেলায় সফল দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম কিংবা জার্মানির মতো দেশগুলো। আর ঠিক এই কঠোর সিদ্ধান্তের অভাবই আমাদেরকে ফেলেছে চরম ঝুকির মুখে।

ধর্মীয় ইস্যুতে এই কঠোর সিদ্ধান্ত না নিতে পারার দুর্বলতাই সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। ২৭ মার্চ পর্যন্তও জুম্মায় ভিড় জমিয়েছেন মুসল্লীরা, কিন্তু তবুও মসজিদে নামাজ বন্ধের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গুজব ছড়ানোর জন্য মার্চ মাসেও অনেককে গ্রেফতার করার খবর শোনা গেছে, কিন্তু যেই ধর্মব্যবসায়ীরা ‘উপরে আল্লাহ থাকতে করোনা কিছু করতে পারবে না’ বলে মানুষকে ধর্মের নামে ভড়কে দিয়েছেন বারবার, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাই মার্চের ১৯ তারিখেও লক্ষ্মীপুরে ধর্মীয় সমাবেশে যোগ দেন লাখো মানুষ। গার্মেন্টস বন্ধ দেয়া এবং খোলার রাখার সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও এই সমন্বয়হীনতাই সবচেয়ে বেশি চোখে পরে। আর সর্বশেষ এপ্রিলের ১৯ তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধর্মীয় নেতার জানাজায় লাখ লাখ মানুষের ভিড় তো বাকরুদ্ধই করেছে সবাইকে।

 

স্বল্প সংখ্যক পরীক্ষা

শুরু থেকেই দাবি করা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে বাংলাদেশ। এই দাবি সত্য হলে ধরে নিতে হয়, কোনো কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাই চোখ এড়িয়ে গেছে আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। ১৬ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে ‘ডব্লিউএইচও’-এর পরিচালক জানান, দেশগুলোর প্রতি একটাই কথা বলার আছে তার – ‘টেস্ট, টেস্ট এবং টেস্ট’। বাংলাদেশ ঠিক এই টেস্টের সক্ষমতার দিক থেকেই পিছিয়ে আছে সবচেয়ে বেশি। ২০ এপ্রিলের হিসেব অনুযায়ী প্রতি মিলিয়নে মাত্র ১৬২টি করে টেস্ট করা হয়েছে বাংলাদেশে। সংখ্যাটি কত কম, তা বোঝা যায় যখন দেখা যায় প্রতি মিলিয়নে টেস্টের হিসেবে বাংলাদেশের নিচে আছে মাত্র ১৫টি দেশ। এক সপ্তাহ আগেও এই সংখ্যাটি ছিল প্রতি মিলিয়নে মাত্র ৯৩। ৩০ মার্চ পর্যন্ত সর্বমোট পরীক্ষা করা হয়েছিল মাত্র ১৩৪৮ লোকের।

টেস্টের হিসেবে এশিয়াতে শুধু মিয়ানমার এবং ইন্দোনেশিয়ার থেকে বেশি টেস্ট করেছে বাংলাদেশ। এমনকি আফগানিস্তানও বেশি টেস্ট করেছে বাংলাদেশের থেকে। সেখানে প্রতি মিলিয়নে টেস্ট করা হয়েছে ১৬৫। পাশের দেশ ভারত প্রতি মিলিয়নে টেস্ট করেছে ২৯১টি করে। শ্রীলঙ্কায় সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৩০২টি। এমনকি পাকিস্তানও প্রতি মিলিয়নে আমাদের থেকে তিনগুন বেশি পরীক্ষা করেছে, সেখানে সংখ্যাটা ৪৭২। যেই দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ পুরো বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে, সেখানে প্রতি মিলিয়নে পরীক্ষা করা হয়েছে ১০,৯৮২ মানুষের। মার্চ মাসের হিসেব অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়া প্রতি সপ্তাহে দেড় লাখ পরীক্ষা করতে সক্ষম।

বাংলাদেশে এখন ১৯টি পরীক্ষাগার আছে। গত কয়েকদিনের হিসেবে সেখানে ২০০০-২৫০০ করে পরীক্ষা করা হয়েছে প্রতিদিন। সরকারি দাবি অনুযায়ী, আরো দু’টি ল্যাব পাইপলাইনে আছে। ল্যাবের সংখ্যা ২১ হলেও প্রতিদিনের পরীক্ষা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারের বেশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। সর্বোচ্চ সক্ষমতায় যদি প্রতিদিন সাড়ে ৩ হাজার পরীক্ষাও করা হয় এদেশে, তবে প্রতি সপ্তাহে পরীক্ষা করা হবে ২৪৫০০ মানুষের। সংখ্যাটি দেড় লাখ ছাড়াবে ছয় সপ্তাহ পরে। তার মানে, দক্ষিণ কোরিয়া এক সপ্তাহে যতো পরীক্ষা করবে, সেই সংখ্যক পরীক্ষা করতে আমাদের লাগবে দেড় মাসেরও বেশি সময়।

 

নমুনা পরীক্ষায় মানুষের ভোগান্তি

সক্ষমতায় যোজন যোজন পিছিয়ে থাকার সাথে অরাজকতা যোগ করুন, এদেশকে মগের মুল্লুকের থেকে বেশি কিছু মনে হবে না। পরীক্ষা বলুন কিংবা চিকিৎসা, কোনো কিছুতেই আশাব্যঞ্জন কোনো চিত্র নেই। ৩০ মার্চ বিবিসি বাংলার এক রিপোর্টে উঠে এদেশে করোনা পরীক্ষার চিত্র। এক্ষেত্রে মূলত দুটি সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। প্রথমত, টেস্ট করাতে তদবির করতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, তালিকাভুক্ত হয়েও অপেক্ষায় কাটাতে হচ্ছে একাধিক দিন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বিবিসিকে জানিয়েছেন, আইইডিসিআরের হটলাইনে ফোন করে কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত সরাসরি তাদের কার্যালয়ে যাওয়ার পর তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। বলা হয়েছে হটলাইনে চেষ্টা করতে। শেষ পর্যন্ত অনেক চেষ্টা-তদবিরের পর নমুনা পরীক্ষা করতে পারেন তিনি।

পরীক্ষার ক্ষেত্রে যাচাই বাচাইও ঢালাও পরীক্ষার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যারা বিদেশ থাকা আসা কারো সংস্পর্শে আসেন নি, তাদের পরীক্ষা করা হয়নি অনেকদিন। তখনই যে বাংলাদেশে করোনা কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের পর্যায়ে চলে গেছে, তা তো সংবাদ সম্মেলন করেই জানানো হয়েছে। ব্যবস্থাপনায় ভুল পন্থা অবলম্বনের সাথে বিশৃঙ্খলতা যোগ হয়ে ব্যাপারটিকে প্রায় অসহনীয় করে তুলেছে। নমুনা পরীক্ষা করতে দেয়ার পর রিপোর্ট হারিয়ে গেছে – এমন কথাও শুনতে হয়েছে অনেককে!

 

চিকিৎসা করতে গিয়ে বিপদে রোগীরা

চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রেও চিত্রটা একই। ফেব্রুয়ারিতে সারা দেশে দশ হাজার শয্যার ব্যবস্থা করার দাবি করলেও এখন এসে দেখা যাচ্ছে, করোনার উপসর্গ আছে এমন কোনো রোগীকে সারা দেশের কোনো হাসপাতাল চিকিৎসা দিতে রাজি নয়। এমন উপসর্গ দেখলেই চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানায় সাধারণ হাসপাতালগুলো। কারণটা খুব সহজ, বেশিরভাগ ডাক্তারদেই কাছেই এখনো পিপিই নেই, নেই করোনা চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। তাই করোনা উপসর্গ আছে এমন রোগীদের বলা হচ্ছে আইইডিসিআরের সাথে যোগাযোগ করতে। আবার আইইডিসিআর কিংবা করোনা স্পেশালাইজড কোনো হাসপাতালে গেলে জানানো হয়, বিদেশি কারো সংস্পর্শে না আসলে করোনা চিকিৎসার দরকার নেই। সেখান থেকে আবার পাঠিয়ে দেয়া হয় সাধারণ হাসপাতালে। করোনা উপসর্গ কিংবা সাধারণ হাঁচি কাশি আছে এমন রোগীরা তাই পরছেন এক অনন্ত ঝঞ্ঝাটে। করোনার বিরুদ্ধে মোকাবেলার প্রস্তুতিকালীন সময়ে তাই যত দাবি করা হয়েছিল, এখন সবকিছুকেই শুধু ফাঁকা বুলি মনে হয়।

আক্রান্ত রোগীরাও কতটা ভালোভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেন, তা নিয়ে আছে প্রশ্ন। ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজে অবহেলায় একজন রোগী মৃত্যুর খবর। কানাডা ফেরত একজন ছাত্রী পেটের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর যখন ডাক্তার এবং সেবিকারা জানতে পারেন যে তিনি কানাডা থেকে এসেছেন, এরপর থেকে তার কাছে আর কোনো চিকিৎসা কর্মী আসেননি। ঢাকার একটি পোশাক কারখানার মালিক মোহাম্মদ তাসলিম আক্তার ৯ই এপ্রিল ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে মারা যাওয়ার পর তার ছোটভাই দাবি করেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার ডায়াবেটিক ভাইকে ১২ ঘন্টা কোনো খাবার দেয়া হয়নি, এমনকি কোনো চিকিৎসকও আসেননি তাকে দেখতে।

বিবিসিতে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় পরীক্ষা করতে গিয়ে কতটা ভোগান্তি পোহাতে হয় মানুষকে। সেই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ঢাকা মেডিকেলের আইসোলেশন রুমের অবস্থা। রোগীর বর্ণনা অনুযায়ী, “সে কক্ষে প্রথমে পাঁচজন ছিল। দুপুর যত গড়াতে থাকে রোগী ও লোক বাড়ছিল। ঐ রুমটার বর্ননা দেওয়া দরকার। রুমটাতে দুইটা বেড। আর তিনটা করে জোড়া লাগানো নয় জনের বসার জায়গা।

এক পর্যায়ে ১৯ জন হয়ে গেল ওই রুমের মধ্যে। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসা। কেউ ক্রমাগত হাঁপাচ্ছে। মুখে মাস্ক নাই। কেউ কাশছে। ওখানে বাচ্চারাও ছিল। ৫ বছর, ১০ বছরের বাচ্চা। বয়স্ক লোক ছিল। সামাজিক দূরত্ব বলতে কিছুই ছিল না।”

যেই আইসোলেশন রুমে সম্ভাব্য করোনা রোগীদের থাকার কথা, সে রুমেও যখন সামাজিক দূরত্ব মানার অবস্থা নেই, তখন আর এদেশের করোনা ব্যবস্থাপনা নিয়েই বলার মতোই কিছু থাকে না।

খুব সোজা কথায় বলা যেতে পারে, করোনা লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো সামগ্রির আমাদের দরকার অনুযায়ী ছিল না। সেটা আসলে কোনো দেশেরই নেই। যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি কিংবা স্পেনও পিপিই কিংবা ভেন্টিলেটরের সমস্যায় ভুগছে, ভুগছে টেস্টিং কিটের অভাবে। তাই আমাদের সমস্যাটা আসলে সরঞ্জামের স্বল্পতা নয়, সমস্যাটা দৃষ্টিভঙ্গির কিংবা সদিচ্ছার। ‘করোনা মোকাবেলায় আমরা বিশ্বের সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছি’ – এমন বোকার রাজ্যে দিন না কাটিয়ে যদি সীমাবদ্ধতাগুলোকে চিহ্নিত করে আগের থেকে ব্যবস্থা নেয়া হতো, তাহলে হয়তো এখন সময় হারিয়ে হাহাকার করা লাগতো না।

জানুয়ারির ২৮ তারিখে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এক সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ থেকে কোনো বিশেষজ্ঞ দলকে চীনে পাঠিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে আসার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না। এই প্রশ্ন শুনে হেসে উঠেন সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত প্রায় সবাই।

এখন এসে সেই গণমাধ্যমকর্মীকে অসম্ভব বিজ্ঞ মনে হচ্ছে, আর আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে মনে হচ্ছে সুকুমার রায়ের কবিতার সেই সৎপাত্রের মতো। কেন, পড়েন নি?

বিদ্যে বুদ্ধিবলছি মশাই

ধন্যি ছেলের অধ্যবসায় !

উনিশটি বার ম্যাট্রিকে সে

ঘায়েল হয়ে থাম্ শেষে।

 

Share this Article
Leave a comment